স্বর্ণদীপ বাগ, ঝাড়গ্রাম, ১৫ মার্চ: একদিকে বেনজির নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যে জুড়ে চাকরি হারাচ্ছেন হাজার-হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। অন্যদিকে, গত ১০ বছরে সেই তুলনায় হয়নি শিক্ষক নিয়োগ। বরং, প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষকরা বদলি নিয়ে শহরের স্কুলে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পৌঁছেছে খোদ কলকাতা হাইকোর্টেও। গ্রাম বাংলার তেমনই একটি স্কুল ঝাড়গ্রাম জেলার নেতাই উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩৫০। কিন্তু, শিক্ষক মাত্র ৪ জন। নেই জীবন বিজ্ঞান (Life Science), ভৌত বিজ্ঞান (Physical Science), ইতিহাস (History)- এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক। শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কের শিক্ষক আছেন। এদিকে, ভূগোলের শিক্ষক আবার গত ৭ মাস ধরে চিকিৎসা জনিত কারণে ছুটিতে বা মেডিক্যাল লিভে আছেন। দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পা বাদ দিতে হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের টিচার ইন চার্জ তথা ইংরেজির শিক্ষক জানান। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা চরম বিক্ষোভ দেখালেন। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে তালা ঝুলিয়ে দিলেন বিদ্যালয়ের মেন গেটে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী দেবস্মিতা জানা সহ ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, “আমরা মাধ্যমিক দেব। অথচ, জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞানের মতো বিষয়ের শিক্ষক নেই! আমরা কি শিখব? বিদ্যালয়ে আসি কিজন্য? অবিলম্বে আমাদের শিক্ষক দরকার।” অভিভাবকের মধ্যে বর্ষীয়ান অশোক কুমার রায় জানান, “২০০৯ সাল থেকে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম থেকেই শিক্ষকের অভাব। আমরা বারবার বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়েছি। গত নভেম্বর মাসে ডিআই অফিস সহ বিভিন্ন জায়গায় ডেপুটেশন দিয়েছি। তাও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ৬টি ক্লাসের (পঞ্চম-দশম) জন্য মাত্র ৪ জন শিক্ষক। অংক, ইংরেজির মতো বিষয়ে ১ জন করে শিক্ষক। জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষক নেই। এছাড়াও, ইতিহাস, শারীর শিক্ষা (Physical Education) প্রভৃতি বিষয়েও শিক্ষক নেই। এই পরিস্থিতিতেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। আবার যারা মাধ্যমিক দেবে কিংবা অষ্টম-নবম শ্রেণীতে পড়ছে, তাদের অবস্থাটা একবার ভাবুন! প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার এমনই হাল! আজ তাই বিদ্যালয়ে তালা ঝোলাতে বাধ্য হয়েছি আমরা।” টিচার ইনচার্জ সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও গ্রামবাসী তথা অভিভাবকদের এই দাবিকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের মত, “নিয়োগের দাবিকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। ৬ টি ক্লাসে মাত্র ৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে, একজন চিকিৎসা জনিত ছুটিতে আছেন। টিচার ইনচার্জ-কে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রায় ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে স্কুলে। তাদের পড়াশোনার সত্যিই ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে আমরা জানিয়েছি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে। কিন্তু, এখনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”