দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জানুয়ারি: ছোট থেকেই অনীকের শিল্প প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুর সমগ্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। তবে, অনলাইনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনীক ইতিমধ্যে জিতে নিয়েছে দেশ-বিদেশের শতাধিক পুরস্কার। তবে, সব পুরস্কার-কে ছাপিয়ে গিয়ে খড়্গপুর শহরের ১৫ বছরের ‘বিস্ময় প্রতিভা’ অনীকের আঁকা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু’র পোর্ট্রেট (Portrait) এবার জিতে নিয়েছে জাতীয় পুরস্কার (National Award)। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (PMO) এর তরফে গত ২৫ জানুয়ারি খড়্গপুরের অনীক সহ সারা দেশের মাত্র ২৫ জন শিল্পীকে (স্কুল-কলেজ লেভেলে) দিল্লিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। পুরস্কার তুলে দিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। দেশের সেরা এই ২৫ জন শিল্পীকে ২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজেও অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। গর্ব ও মর্যাদায় অনীকের এই পুরস্কার তাই একযোগে সমৃদ্ধ করল খড়্গপুর সহ গোটা জেলা তথা বাংলাকেও। উচ্ছ্বসিত রেল শহরের বাসিন্দারা। গতকাল অর্থাৎ শনিবার দিল্লি থেকে ফেরার পরই তাই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এই ছাত্রকে ফুলে-মালায় বরণ করে নিয়েছে খড়্গপুর। জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়িতে করে ঘোরানো হয়েছে অনীককে। আনন্দ-অশ্রুতে ভাসছেন মা অপর্ণা জানা। আপ্লুত, গর্বিত বাবা জয়ন্ত কুমার জানা।
আজ, রবিবার, সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অনীক জানিয়েছে, “পরাক্রম দিবস (২৩ জানুয়ারি) উপলক্ষে গত ১১ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু’র পোর্ট্রেট অঙ্কনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (Ministry of Defence) ও মাই গভ (My Gov)-এর তরফে। আমিও পোর্ট্রেট অঙ্কন করে অনলাইনে জমা করেছিলাম। গোটা দেশের ৬ হাজারের বেশি প্রতিযোগী (৬৬৬৭ জন) এই ছবি অঙ্কন করেছিলেন। সেরা ২৫-টি বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় জায়গা পেয়েছে আমার ছবিটিও।” অনীক জানায়, “গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আমাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। ২৬ জানুয়ারি আমরা দিল্লির রাজপথে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।” নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে অনীক জানায়, “খুব ভালো লাগছে। এই অনুভূতি আমি প্রকাশ করতে পারবো না!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনীক কলাইকুন্ডা’র কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়-১ (Kendriya Vidyalaya-1) এর নবম শ্রেণীর ছাত্র। বাড়ি খড়্গপুর শহরের ৩২ নং ওয়ার্ডের আরামবাটিতে। বাবা জয়ন্ত কুমার জানা বেসরকারি ব্যাঙ্কের একজন কর্মী। তিনি জানান, “আমরা সত্যিই গর্বিত। উচ্ছ্বসিত। আমাদের খড়্গপুর সহ সারা দেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। খড়্গপুরবাসী যেভাবে ওকে ভালোবেসে বরণ করে নিয়েছে, প্রথম থেকেই ওকে উৎসাহিত করে গেছে, তা আমাদের কাছে কল্পনাতীত। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।” অনীকের মা অপর্ণা জানা গৃহবধূ। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন! বললেন, “কি বলব! ছোটো থেকেই ও আঁকাআঁকি করে। শিল্পের প্রতি ওর ঝোঁক। অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। তবে, এবারের এই পুরস্কার…আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা!” খড়্গপুরের বাসিন্দা তথা অনীক’দের প্রতিবেশী মিঠু ঘোষ সাহা কিংবা সন্দীপ নাগ প্রমুখ বলেন, “ও শুধু খড়্গপুরকে নয়, গোটা বাংলা-কে গর্বিত করেছে। অনেক লড়াই করে ওর বাবা-মা আজকে ওকে এই জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। তবে, আমরা চাইব, ওর শিল্প প্রতিভা যেন অর্থের অভাবে হারিয়ে না যায়! কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করলে ভালো। তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় শিল্পী হয়ে উঠবে।” অনীকও জানায়, “ভবিষ্যতে যাই করিনা কেন, আমি শিল্পকে আঁকড়েই বেঁচে থাকব!”