তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জানুয়ারি: এও এক আজব নিয়ম! দেবতার ভোগ রান্নার জন্য চাই মড়া পোড়ানোর শেষে আধপোড়া কাঠগুলি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লয়েরগোড়া শ্মশানের উপর অধিষ্ঠান করছেন মহাপ্রভু। প্রতিবছর মকরসংক্রান্তি’র দিনে মহাপ্রভুর বড় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর, এই পুজোকে কেন্দ্র করে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন। মহাপ্রভুর বড় ভোগ উপলক্ষে, আজ, মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে রাত্রিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ খিচুড়ি ভোগ গ্রহণ করবেন। আর, সেই রান্না করার জন্য চন্দ্রকোনা এলাকার বিভিন্ন শ্মশান ঘুরে ঘুরে আধপোড়া কাঠগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় মহাপ্রভুর ভোগ রান্নার জন্য।
প্রচলিত আছে মড়া পোড়ানো বা দাহ করার শেষে আধপোড়া কাঠে রান্না করা মহাপ্রভুর ভোগ খেলে নাকি শারীরিক সুস্থতা লাভ করেন ভক্তরা। আর, এই ভোগ পাওয়ার জন্যই দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এলাকার বাসিন্দা গোপাল ভূঁইয়া, গোপাল দাস বৈরাগী প্রমুখ জানান, “আমরা পূর্ব পুরুষের মুখ থেকে শুনে আসছি এই পুজোর কথা। এই ভাবেই রীতি ও পরম্পরা মেনে মহাপ্রভুর পুজো হয়ে আসছে।” বংশপরম্পরায় মন্দিরের পুরোহিত শক্তি চক্রবর্তী। তিনি জানান, “আমার দাদু, তাঁর দাদু এই মন্দিরে পূজা করতেন। বর্তমানে আমাদের পরিবারের সদস্যরাই এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। মহাপ্রভু প্রায় ৪০০ বছরের অধিক প্রাচীন। মানুষ এখানে আসেন বিভিন্ন মনস্কামনা নিয়ে। আর, সেই মনস্কামনা পূরণ হয় বলেই হাজার হাজার মানুষ আজও এখানে এসে উপস্থিত হন।” মকর সংক্রান্তি তিথিতে ক্ষীরপাই সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে এই পুজোর কাজ করেন। মন্দিরের অন্যতম কর্মকর্তা বাবলা সাঁতরা বলেন, “মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে এসে এখানে চাঁদা দেন। সেই দানেই এত মানুষের ভোগ বিতরণ করা হয়।” সবমিলিয়ে, লয়েরগড়ার মহাপ্রভুর মাহাত্ম্য আজ এলাকার মানুষের মুখে মুখে।