দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ জানুয়ারি:”তবু যেতে দিতে হয়/ তবু চলে যায়…!” নিয়ম মেনেই ৩৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে ছেদ পড়তে চলেছে। চলতি মাসের শেষেই (৩১ জানুয়ারি) অবসর গ্রহণ করবেন মেদিনীপুর শহরের কর্ণেলগোলা শ্রী নারায়ণ বিদ্যাভবন বালিকা বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা শম্পা দাস সরকার। ১৯৮৯ সালের ৩ নভেম্বর স্কুলে যোগদান করেছিলেন। ৩৩ বছরের সুদীর্ঘ শিক্ষকতা-জীবন যেন ‘জীবন’ এরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে জড়িয়ে পড়েছিল! প্রিয় সেই স্কুলকে ‘বিদায়’ জানানোর আগে, ‘উপহার-স্বরূপ’ কিছু তুলে দিতে চেয়েছিলেন শম্পা দিদিমণি। তিনি বললেন, “স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করার আগে স্কুলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের একটি আবক্ষ মূর্তি বসানোর ইচ্ছে প্রকাশ করি। স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত হলেও, নারী শিক্ষায় তাঁর অবদান স্মরণ করে মেদিনীপুরের ‘গর্ব’ বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। আর তার সঙ্গে, ছাত্রীদের পুরস্কার তহবিলে ১ লক্ষ টাকা তুলে দিতে চেয়েছিলাম।” তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান দিয়েই, ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল প্রাঙ্গণে বসলো বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি। বুধবার সেই আবক্ষ মূর্তি উন্মোচিত হল।
অবসর নেবেন ৩১ জানুয়ারি (২০২৩)। তবে, মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল বুধবার। উপস্থিত হয়েছিলেন, MKDA চেয়ারম্যান দীনেন রায়, মেদিনীপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ অন্যান্য অতিথিরা। শিক্ষিকা শম্পা দেবী বললেন, “নারী শিক্ষার অগ্রদূত বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে গিয়েছি বছর ১৫ আগে। আর সময় হয়নি সেখানে যাওয়ার। তবে, অবসরের পরেও যে দিনগুলি স্কুলে আসবো, ছাত্রীদের সাথে যেন আমিও স্মরন করতে পারি বিদ্যাসাগর মশাইকে, সেজন্যই এই উদ্যোগ।” একইসঙ্গে, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী ও একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানাধিকারীদের এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তদের পুরস্কৃত করার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার হাতে ১ লক্ষ টাকার চেক প্রদানও করলেন মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের বাসিন্দা শম্পা দাস সরকার। স্বামী ড. হরিপ্রসাদ সরকার গড়বেতা কলেজের অধ্যক্ষ। একমাত্র ছেলে থাকেন আমেরিকায়। বুধবার স্কুল প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে দিদিমণি বললেন, “দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকতা করার পর এবার একটু মুক্ত হবো। রাজ্যের ও দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছে পূরণ করব। মাঝেমধ্যে অবশ্যই প্রিয় এই স্কুলে আসব।” এদিন, স্কুলের ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের জন্য মুরগি মাংস সহযোগে মধ্যাহ্ন ভোজনেরও ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা সেন জানান, “অবসরকে স্মরণীয় করে তুলতে উনি কিছু ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। ওনার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি।”