দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ ডিসেম্বর: রাজপ্রাসাদের মতো ঝাঁ-চকচকে দোতলা বাড়ি, বাড়িতে লাগানো জোড়া এসি (AC), জোড়া ডিস অ্যান্টেনা! বাড়ির মালিকের নাম আছে আবাস প্লাসের (প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা) তালিকায়। আর, প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মতোই, অট্টালিকার নিচে থাকা ভাঙা কুঁড়ে ঘর গুলির বাসিন্দাদের নাম এবারও বাদ পড়েছে কোনো এক ‘অদৃশ্য’ কারণে! সমীক্ষা করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ মহকুমা শাসক থেকে খোদ অতিরিক্ত জেলা শাসকের। তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রকৃত উপভোক্তারা। অভিযোগ ছিল অট্টালিকার মালিক শাসকদলের সক্রিয় নেতা। দু’দিন আগেই এমন ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-১ নং ব্লকের নন্দনপুর-২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মা, পাইকানবৈলা এলাকায়। মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি! তবে, অট্টালিকা বা রাজপ্রাসাদের মালিকদের নাম যে বাদ যাবে, সেই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, শালবনীর কর্ণগড় ১০ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্ণগড় সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আবার এর উল্টো ঘটনা! ভাঙা বাড়ি, আরো ভেঙে ভেঙে পড়ছে। আবাস যোজনার বাড়ির জন্য আবেদন করেও, নাম বাদ পড়েছে তালিকা থেকে! না, এজন্য তাঁরা শাসক দলের দুর্নীতি নয়, খোদ আধিকারিকদের দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলেছেন। এমনকি, প্রকৃত উপভোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন খোদ শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য। রবিবার গ্রামে যখন বিডিও গিয়েছিলেন সমীক্ষা করতে, উপভোক্তাদের সঙ্গে নিয়েই পঞ্চায়েত সদস্যরাও তাঁর কাছে জবাবদিহি করেছিলেন, “এই উপভোক্তাদের নাম বাদ পড়লো কার ভুলে?” কর্ণগড় সংলগ্ন দুটি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য যথাক্রমে দুলাল দে এবং প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী ক্যামেরার সামনে বললেন, “উদাহরণ দিয়ে আপনাদের বলে দিচ্ছি, ২০১৭-১৮ সালে বাড়ি পেয়েছেন শিবু দোলই, ফুকনি দোলই প্রমুখ। তাঁদের নামে তাঁদের নিজেদের জব কার্ড নম্বর এন্ট্রি না করে, এন্ট্রি করা হয়েছে সুনীল পন্ডা, প্রসন্ন পন্ডাদের জব কার্ড নম্বর। ফলে এই সুনীল পন্ডা, প্রসন্ন পন্ডাদের মতো কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক যোগ্য ব্যক্তি এবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। শুধু কর্ণগড় গ্রামেই এরকম ৪০ জন আছেন, যাঁদের ভাঙা বাড়ি, কখনও বাড়ি পাননি, এবারও তাঁরা আধিকারিকদের ভুলে তালিকা থেকে বাদ পড়লেন। এর দায় কার?” উল্লেখ্য যে, এবারের আবাস প্লাসের নিয়ম অনুযায়ী, উপভোক্তাদের নামের সঙ্গে সঙ্গে জব কার্ড নম্বর এন্ট্রি করতে হবে। আর, সুনীল পন্ডা, প্রসন্ন পন্ডাদের মতো প্রকৃত উপভোক্তাদের জব কার্ড এন্ট্রি করার পর সিস্টেমে দেখাচ্ছে তাঁরা ২০১৭-‘১৮ তেই বাড়ি পেয়ে গেছেন! কিন্তু, তাঁরা বাড়ি পাননি। এখনও ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়িতে বাস করেন। অথচ, তাঁদের জব কার্ডে বাড়ি পেয়েছেন অন্যরা। এর পেছনে আধিকারিকদের ‘দুর্নীতি’ থাকতে পারে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। পঞ্চায়েত সদস্যরাও সঠিক তদন্তের দাবি করেছেন। এদিকে, বিডিও প্রণয় দাস অবশ্য আধিকারিকদের ভুল বা দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে, আজ, কালের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন বঞ্চিত উপভোক্তারা।