দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা, ১০ ডিসেম্বর: স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রথম এসএলএসটি (1st SLST, 2016) এখনও পর্যন্ত যে ২৩,৪৪৯ জনের চাকরি হয়েছে শিক্ষক (নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ) এবং শিক্ষাকর্মী (গ্রুপ সি-ডি) পদে, তারমধ্যে ৮১৬৩ জনের নিয়োগই হয়েছে ওএমআর (OMR) কারচুপি করে। শতাংশের হিসেবে অন্তত ৩৫ (35) শতাংশ নিয়োগ-ই হয়েছে জালিয়াতি করে! অবশ্য, বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটিও প্রায় একই ধরনের রিপোর্টই দিয়েছিলেন। এদিকে, শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সমস্ত তথ্য প্রমাণ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে জমা দিয়েছে সিবিআই (CBI)। শুক্রবার-ই এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এই কারচুপি করা হয়েছে খোদ স্কুল সার্ভিস কমিশনের কার্যালয়েই। তিন তলার ডেটা রুমে বা সার্ভার রুমেই সমস্ত কারচুপি করা হয়েছে বলে সিবিআই -এর হাতে উঠে এসেছে প্রমাণ। ইতিমধ্যে, সিবিআই এর বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) জানিয়েছে, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) মূল্যায়নের বরাত দেওয়া হয়েছিল ‘নাইসা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক এক সংস্থাকে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে নয়ডার এই সংস্থার প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে সিবিআই তিনটি হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করে। সেখান থেকেই ২৩ লক্ষ ওএমআর (OMR) উদ্ধার হয়েছে।
তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা খুঁজে পেয়েছেন, নিয়োগ পাওয়া ৮১৬৩ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর ওএমআরে কারচুপি করে নম্বর বাড়ানো হয়েছে! ইতিমধ্যে, নমুনা হিসেবে ৪০টি ওএমআর (OMR) স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উদ্ধার হওয়া তিনটি হার্ডডিস্কে উত্তরপত্রের (ওএমআর শিট) স্ক্যান কপি এবং নম্বর ছিল। সিবিআই আধিকারিকরা তদন্তের সূত্রে জানতে পেরেছেন, পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের পরে নম্বর-সহ তথ্যভান্ডারে রেখে দেওয়া হয়। আদালতে সিবিআইয়ের দাবি, তিনটি হার্ডডিস্ক এবং কমিশনের তথ্যভান্ডার পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। তদন্তের সময় কমিশনের তথ্যভান্ডারও বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে তদন্ত এগোলে আরও কারচুপি’র প্রমাণ মিলবে! নয়ডার ওই সংস্থা থেকে পাওয়া যাবতীয় নথি স্কুল সার্ভিস কমিশনকেও দিয়েছে সিবিআই। তার মধ্য থেকেই ৪০-টি ওএমআর (OMR) প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে, ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের স্কুল এবং তাঁদের এলাকা থেকে এক প্রকার উধাও হয়ে গেছেন! তবে, কয়েকজন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে! আরও বড় দুর্নীতি ঢাকতেই স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রথমে ১৮৩ ও পরে ৪০ জনকে বলি দিতে চাইছে! যদিও, ওয়াকিবহাল মহল এবং আইনজীবীদের মতে, এই ৮১৬৩ জনেরই চাকরি যাওয়াটা একপ্রকার পাকা! তদন্ত এগোলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।