সুদীপ কুমার খাঁড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ নভেম্বর: বুকে যার অদম্য জেদ, হৃদয়ে এক আকাশ স্বপ্ন আর লক্ষ্য স্থির অর্জুনের মতো- পুরুষ কিংবা নারী, জয় তো তাঁর নিশ্চিত! মেদিনীপুরের ইন্দ্রানী তেমনই এক উদাহরণ। থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)’র সাথে লড়াই করেই ডাক্তারি পড়ায় সুযোগ পেলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা ইন্দ্রানী বিশ্বাস। ডাক্তারি পড়ার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা NEET (National Elegibility Cum Entrance Test) পরীক্ষায় এবছর সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন ইন্দ্রানী। আর, ইতিমধ্যেই MBBS পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (NRS Medical College)।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জন্মের সাতমাস পরেই ইন্দ্রানীর বাবা পেশায় স্কুল শিক্ষক অভিজিৎ বিশ্বাস এবং মা গৃহবধু তনুজা বিশ্বাস জানতে পারেন, তাঁদের মেয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। সেদিন থেকেই শুরু হয় লড়াই। প্রথম দিকে মাসে একবার করে রক্তের প্রয়োজন হতো ইন্দ্রানীর। এখন মাসে দু’বার কলকাতায় গিয়ে রক্ত নিতে হয় ইন্দ্রানীকে। অসম্ভব মনের জোর আর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ও অনুপ্রেরণাকে সঙ্গী করে বরাবর ভালো রেজাল্ট করে এসেছে মেধাবী ছাত্রী ইন্দ্রানী। ইন্দ্রানীদের আদি বাড়ি বাঁকুড়া জেলার নিবড়া গ্রামে হলেও, এখন বাবা-মা ও ভাই সর্বমান বিশ্বাসের সাথে মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে থাকে ইন্দ্রানী। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ইন্দ্রানী পড়াশোনা করেছে বাঁকুড়া জেলার গড়গড়িয়া সুভাষ হাইস্কুলে। এরপর, ২০১৯ সালে মেদিনীপুর শহরের নির্মল হৃদয় আশ্রম স্কুলের বালিকা বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ইন্দ্রানী। তবে, একবুক স্বপ্ন আর জেদ নিয়ে নিট (NEET) পরীক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল সে।
উল্লেখ্য যে, ইন্দ্রানীর চলার পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না। চিকিৎসার কারণে অনেক সময়ই ভর্তি থাকতে হয়েছে হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে। তবে, জেদ ছাড়েনি ইন্দ্রানী। সেই অবস্থাতেই লড়াই চালিয়ে গেছে। করোনা অতিমারীর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে রক্ত পাওয়া একপ্রকার দুষ্কর হয়ে পড়েছিল! সেই সময়ও বাবা-মা ও শুভানুধ্যায়ীদের সাথে নিয়ে জীবন যুদ্ধের লড়াই চালিয়ে গেছে। চিকিৎসা জনিত কারণে ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে মাঝে মাঝে পড়াশুনো ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও, ইন্দ্রানী তার লক্ষ্যে অবিচল থেকেছে। সেই আত্মবিশ্বাস, লড়াই; বাবা-মা’র স্নেহ, ভালোবাসা ও উৎসাহ প্রদান এবং শুভানুধ্যায়ীদের আশীর্বাদে আজ ইন্দ্রানীর লড়াই স্বার্থক হয়েছে। নিজের মেধা, পরিশ্রম ও যোগ্যতায় মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ পেয়েছে ইন্দ্রানী। ইন্দ্রানীর এই লড়াই ও সাফল্য শুধু তার একার নয়, তা আরও অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। ইন্দ্রানী জানিয়েছে, তার জীবনযুদ্ধের লড়াই যেহেতু রক্তের জন্য, তাই তার ইচ্ছে হেমাটোলজি নিয়ে পড়াশুনো করার।