তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ নভেম্বর: বরাবরই তিনি ব্যতিক্রমী। রাজনীতির ‘পাঁকে’ নেমে পড়েছেন ঠিকই, তবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে একেবারেই বিশ্বাসী নন! তাই, একসময়ের ‘বন্ধু’ তথা বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক (খড়্গপুর সদর) হিরণের ব্যক্তিগত কুরুচিকর আক্রমণের জবাবেও, ‘দেব-সুলভ’ ভদ্রতাতেই জবাব দিলেন ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে সুপারস্টার দেব। এদিন তিনি বললেন, “হিরণ আমার ভালো বন্ধু… জানিনা কি বলে ফেলেছে, কেন বলেছে! হয়তো ওর কাছে ঠিকঠাক তথ্য ছিল না। প্রথমত আমি মালদ্বীপে ছিলাম না, ছিলাম গ্রিসে। আর, ঘাটালের বন্যার সময় আমি আসি কিনা, সেটা ঘাটালবাসী আর ঘাটালের সাংবাদিকরা ভালো বলতে পারবেন! আমি যখন এক হাঁটু জল পেরিয়ে নৌকায় উঠে বন্যা পরিদর্শনে যাই, সাংবাদিকরাও আমার নৌকাতেই থাকেন। আর, আমিই প্রথম যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সংসদে বাংলায় বলেছিলাম। এখন সে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদনও হয়ে গেছে।” বান্ধবীকে নিয়ে ‘ঘুরে বেড়ানো’ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাকে আক্রমণ করলে কর, দয়া করে বাড়িতে ঢুকোনা। আমি বান্ধবীকে নিয়ে যাই, সম্মান নিয়েই যাই। নিজের টাকা খরচ করে যাই। আমাকে শুটিংয়ের কাজে যেতে হয়। আর, আমাদের সম্পর্কও আমি লুকোইনি। গত ৮-৯ বছর ধরে বাংলার মানুষ তথা আমার অনুরাগীরা সব জানেন। তা সত্ত্বেও আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করা মানে, যেকোনো মেয়েকেই অপমান করা! জানিনা হিরণ কেন এমন বলেছে। সে (হিরণ) নিজেও একজন মেয়ের বাবা!”
এরপরই, বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে দেব বলেন, “হিরণ সত্যিই আমার ভালো বন্ধু। আমার একটা সিনেমাতে (চ্যাম্প) বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করে দিয়েছে। আমার অনেক সিনেমার প্রমোশনেও এসেছে। আসলে এটা হিরণের দোষ নয়, সামনে হাজার হাজার লোক থাকলে, আর হাতে মাইক থাকলে; অনেক সময় এরকম বেরিয়ে যায়। তাছাড়া, বিরোধীদের আক্রমণ না করলে ওর দলের লোক ওর কথা শুনবে কেন!” তবে, দেব এও স্মরণ করিয়ে দেন, “যদিও আমি এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আপনারা ভালো করে জানেন, এমন কখনো হয়নি যে আমি আমার দলকে বড় করতে গিয়ে, কাউকে ছোটো করেছি!” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার ঘাটালে বিজেপি সমর্থিত একটি ক্লাবের পুজোর উদ্বোধনে এসে খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ঘাটালের সাংসদ দেবকে নানাভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “সাংসদ হিসেবে মাইনে নেব, সাংসদ হিসেবে ঘাটালে যা কাজ হবে তার কাটমানি নেব, গুরু চোর এনামুল হকের কাছ থেকে কাটমানি নিয়ে সিনেমা করবো আর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে মালদ্বীপে ঘুরে বেড়াবো আর ঘাটালের মানুষ বন্যার জলে সুইমিং করবে!” এছাড়াও, দেবকে সিবিআই ডাকা সহ নানাভাবে ‘বেনজির’ আক্রমণ করেছিলেন হিরণ। উপস্থিত, বিজেপি কর্মী সমর্থকদের হাততালিও কুড়িয়েছিলেন।
তবে, মঙ্গলবার ঘাটালে পৌঁছে তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী তথা অভিনেতা দেব মহকুমাশাসকের দপ্তরে যথারীতি বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে যোগ দেন। সেখান থেকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও যোগ দেন। সবশেষে ঘাটাল কলেজের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের স্বভাবসুলভ ভদ্রতা ও নম্রতা বজায় রেখে হিরণের ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দেন তিনি। দেব বলেন, “আমার টাকার এতটাও অভাব হয়নি কাটমানি খেতে হবে! ঘাটালের মানুষ জানেন, আমি নিজের টাকা দিয়ে লোকের বাড়ি (পান্তিপিসির) তৈরি করে দিয়েছি। আর, এনামুল হককে আমি চিনিইনা! তাই, সিবিআই ডাকতেই গেছি। সব উত্তর দিয়েছি। সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাস। আর, এখন নভেম্বর মাস। আমার কথায় যদি কোন অসংগতি থাকতো, তাহলে তো সিবিআই আবারও ডাকতো। যদি ডাকেও, আবার যাব।” ঘাটাল বাসী এবং তাঁর অনুরাগীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “দেব কখনও এমন কোনো কাজ করেনি যে তাঁকে মাথা নীচু করতে হবে। দেব যদি বিদেশেও যায়, নিজের টাকাতেই যায়, ছাতি ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়!” যদিও, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরে হিরণের সুরেই দেবকে আক্রমণ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “এনামুল হকের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে দেব সিনেমা করেছেন!”