দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর: শুনানি চলাকালীন সিবিআই (CBI)-এর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, “প্রাথমিকে শিউরে ওঠার মতো দুর্নীতি হয়েছে! তদন্ত সঠিক পথে চলছে। খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে।” প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে আঁতকে উঠেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়-ও। এর মধ্যেই, শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে, “ব্রেক আপ নম্বর সহ ২০১৪ টেট থেকে দু’দফায় (২০১৬ ও ২০২০) নিয়োগ হওয়া সমস্ত শিক্ষকের পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। কতদিন লাগবে আপনাদের?” পর্ষদের আইনজীবী জানান, “প্রায় ৬০ (প্রায় ৪৩ হাজার ও প্রায় ১৬ হাজার) হাজার শিক্ষকের নাম প্রকাশ করতে হবে! ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করে দেব। তার আগেও হয়ে যেতে পারে।” বিচারপতি সম্মতি প্রকাশ করেন। তবে, প্রশ্ন উঠছে, এই তালিকা দেখে আদৌও একজন-ও ভুয়ো শিক্ষককে খুঁজে বের করা সম্ভব হবে কি? এই লম্বা সময়ের মধ্যে পর্ষদ কি আদৌও কোনো ‘ফাঁকফোকর’ রাখবে? সেক্ষেত্রে ভরসা একমাত্র সিবিআই-এর তদন্ত রিপোর্ট-ই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ টেট থেকে পাসদের মধ্য থেকে রাজ্যে ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং ২০১৭ সালে নিয়োগ করা হয়। পর্ষদ বিভিন্ন সময়ে জানায়, ৪২-৪৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে ওই সময়। যদিও, গভীর রাতে এসএমএস পাঠিয়ে ২০১৭’র ওই নিয়োগ হয়েছে দাবি করে, মামলাকারী আইনজীবীদের দাবি- “বেনজির দুর্নীতি হয়েছে।” ইতিমধ্যে, ইডি-সিবিআই’ও প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, “সাদা খাতা জমা দিয়েও হয়েছে চাকরি। টাকার বিনিময়ে হয়েছে চাকরি।” একইসঙ্গে তাদের দাবি, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ৫০ কোটি টাকা ওই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির-ই টাকা!” অন্যদিকে, দ্বিতীয় দফায় ২০২০’র ডিসেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, ২০২১ সালে যে ১৬ হাজার ৫০০ (পর্ষদের দাবি) শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, আরটিআই মামলায় পর্ষদের আইনজীবী স্বীকার করে নিয়েছেন, ১৬ হাজার ৫০০ নিয়োগ হয়নি! অন্তত ৪ হাজার শিক্ষকপদ ফাঁকা আছে। এর আগেও, এই দুই নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ মেধাতালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, পর্ষদ তা উপেক্ষা করে এসেছে। এই মুহূর্তে প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-কে বরখাস্ত করা হয়েছে। নতুন সভাপতি ড. গৌতম পাল যে সঠিক নিয়ম মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করবেন, তা নিয়ে নিশ্চিত বিভিন্ন মহল। তবে, সেই তালিকায় ‘দুর্নীতি’ ধরা পড়বে কিনা, তা নিয়ে ‘সন্দেহ’ থাকছেই। তবে, ২০১৪ টেট থেকে কতজন শিক্ষক আদৌও নিয়োগ করা হয়েছে, তা ধরা পড়তে পারে বলে নিশ্চিত আইনজীবীরা। ইতিমধ্যে আবার মানিক ভট্টাচার্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন! খুব তাড়াতাড়ি শুনানি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে, সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আরটিআই মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে পারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। সবমিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এখন টানটান উত্তেজনা!