দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২ সেপ্টেম্বর: অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সমস্ত আরজি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ-ই বহাল রাখলেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। ২৬৯ জন (পর্ষদের হিসেবে ২৭৩)- এর চাকরি যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেল। সেই সঙ্গে অবৈধ উপায় অবলম্বন করে অতিরিক্ত ‘১’ নম্বর দেওয়ার বিষয়টিকেও ‘আইন-বিরুদ্ধ’ হিসেবেই সিলমোহর দেওয়া হলো। ফলে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি (President) মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সিবিআই (CBI) ও ইডি (ED) তদন্ত-ও যেমন চলছিল, তেমনই চলবে বলে আদালত জানিয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ প্রাইমারি টেট মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এ ছাড়াও, মানিক ভট্টাচার্য-কে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে অপসারণের নির্দেশও দেন তিনি। পাশাপাশি, মানিক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির নথি চেয়েছিলেন বিচারপতি। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মানিক ভট্টাচার্যের মামলাটি ওঠে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। যার শুনানি গত ১৯ জুলাই শেষ হলেও রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল। আজ, শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর), সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ তার রায়দান করলেন বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। শুনানি শেষ হওয়ার ১ মাস ১৪ দিন পর শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করল ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন, আদালত জানিয়ে দেয় যে ২৬৯ জনের চাকরি বাতিল করেছিল সিঙ্গেল বেঞ্চ। সিবিআই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পুনর্বহাল করা যাবে না। আদালতের নজরদারিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-ই তদন্ত করবে। সিঙ্গল বেঞ্চের হাতেই থাকবে নিয়ন্ত্রণ। এর আগে, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ে রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, এমনকি রাজ্য সরকারও। এ ছাড়া বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য-সহ যাঁদের পর্ষদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল, তাঁরাও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ডিভিশন বেঞ্চে। আবেদন জানিয়েছিলেন বরখাস্ত হওয়া ২৬৯ জন চাকরিপ্রার্থীরাও। তাঁদের সমস্ত আবেদন এদিন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও লোপিতা বন্দোপাধ্যায়। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে দ্বিতীয় দফায় অবৈধভাবে ২৬৯ জনের নিয়োগ করা হয় কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই, এমনটাই অভিযোগ উঠেছিল। ভুল প্রশ্নে বাড়তি ১ নম্বর বেছে বেছে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। পর্ষদের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে চাকরিপ্রার্থীরা, তাই তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল; যুক্তি দিয়েছিল মানিক ভট্টাচার্যের পর্ষদ। কিন্তু, ওই রকম আন্দোলন যে চাকরি পাওয়ার মাপকাঠি হতে পারে না, পর্যবেক্ষণ ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি ব্যাপক দুর্নীতির ইঙ্গিত দিয়ে, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই মামলায়। সেই নির্দেশ-ই চ্যালেঞ্জ করা হয় ডিভিশন বেঞ্চে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পর্ষদের হাতে ‘অশ্ব ডিম্ব’ই থাকলো! একইসঙ্গে, মানিক ভট্টাচার্যের জেল যাওয়ার পথ আরও সুগম হলো বলেই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা এদিন জানিয়েছেন।