তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ আগস্ট: না! আর কিছু সে চায়নি।‌ অন্যান্য বন্ধুদের মতোই উচ্চ শিক্ষিত হতে চেয়েছিল। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই ব্যাংকের ম্যানেজারদের হাতে-পায়ে ধরে বলেছিল, “আপনারা মাসে মাসে যা পারবেন সুদ নিন, আমাকে লোন দিন। আমি ব্যাঙ্গালোরে পড়তে যাব।” লোন পেয়ে যাবে, এই আশাতেই ভর্তিও হয়ে গিয়েছিল তিথি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত লোনটা হলো না! ব্যাংকের ম্যানেজার এ কথা জানিয়ে দেওয়ার পরই রবিবার রাতে বিষ খায় শৈশব থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের ভেয়েরবাজার এলাকার জয়দেব দোলই ও রিঙ্কু দোলই- এর একমাত্র মেয়ে তিথি দোলই। এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সে। ‌চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনও গভীর সংকটে আছে তিথি!

thebengalpost.net
তিথি দোলই :

জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর তিথি ব্যাঙ্গালোরে একটি নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়, আরও কয়েকজন বন্ধুর সাথে। ভর্তি হওয়ার সময়ই কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, কোর্স কমপ্লিট করতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ভর্তির সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিথি এক লক্ষ টাকা জমা দিয়ে কলেজে ক্লাস শুরু করে। বাকি টাকার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে আবেদন করেছিল তিথি। তিথি সহ তার বাবা-মা ভেবেছিলেন, লোনটা হয়ে যাবে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা না হওয়াতেই, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি তিথি! রবিবার রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে সে। অবস্থা আশঙ্কাজনক! এদিকে, এই বিষয়ে চন্দ্রকোনা স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সান্টু কুমারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন- “তিথির তথ্য সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি থাকার জন্যই তাকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবাটি দেওয়া যায়নি।”

thebengalpost.net
মায়ের কান্না :

অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েও, একাধিকবার ব্যাঙ্কে ঘুরেও লোন না পেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়েই আত্মহত্যা’র কথা ভেবেছে তিথি। তিথির মা রিঙ্কু দোলই মঙ্গলবার বলেন, “নবান্ন থেকে শুরু করে বিকাশ ভবন, একাধিক বার আমার মেয়েটা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য গিয়েছে। ব্যাঙ্কেও গিয়েছে বারবার। কিন্তু, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে। এখন আমার মেয়েকে ফিরে পাবো কি করে?” কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, পরীক্ষার আগে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দিতে হবে। তা না হলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না! এরপরই লোন না পেয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তিথি। এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু’র সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তিথি। পাশের বাড়ির প্রশান্ত সেন, তরুণ রায়’রা বলেন, “ছোট থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ও। আমরা দেখেছি, বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও, ও নিজের জেদে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে! মেয়েটা আরো পড়তে চেয়েছিল, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। হলোনা! সব শেষের পথে। এর দায় কে নেবে?”

thebengalpost.net
মেয়ের সমস্ত নথিপত্র দেখাচ্ছেন মা-ঠাকুমা :