দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ আগস্ট:“২০১৫ সালে নির্বাচন কমিশনকে (পৌরসভা নির্বাচনের সময়) দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছিলেন ওঁর কাছে মাত্র ১ লক্ষ টাকা আছে। ২০২২-এর পৌরসভা নির্বাচনের সময় দেখা গেল, উনি আর ওনার স্ত্রী মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার মালিক! কিভাবে এই ম্যাজিক করলেন দাদা? আমরাও সেই ম্যাজিক শিখতে চাই। চলুন সবাই মিলে ওঁর রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে যাই, সেইখানে গিয়ে এই ম্যাজিক শিখে আসি। আপনারাও (সাংবাদিকরাও) চলুন, আপনারা সারাদিন এতো পরিশ্রমের পরেও যৎসামান্য ইনকাম করেন। ম্যাজিক শিখে গেলে, আমরাও সকলে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারব!” শুক্রবার অনুব্রত’র গ্রেফতারির খুশিতে নিজেই ঢাক বাজিয়ে উৎসব পালন করার পর, উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ‘নাম না করে’ খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান-কে এভাবেই কটাক্ষ করলেন খড়্গপুর (সদরের)-এর বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “বীরভূমের ওই রাবণ-টা গ্রেফতার হয়েছে। খড়্গপুরেও একজন আছেন মহাচোর। আমি তো ২০২১ সাল থেকেই বলে আসছি। উনি যখন ২০১৫ সালে প্রথম ভোটে দাড়ান, তার আগে মাত্র ৬ হাজার টাকা (মাসে) মাইনের চাকরি করতেন। সেই সময় হলফনামায় নিজের অর্থ ও সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ১ লক্ষ টাকার। তারপর নেতা হয়ে নিজের ইনকাম বাড়িয়েছেন কয়েক হাজার গুণ! ২০২২-এর হলফনামায় (পৌর নির্বাচনের সময়) জানিয়েছেন, ওনার আর ওনার স্ত্রী’র নামে সবমিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার অর্থ-সম্পত্তি আছে। তবুও তো অনেক সম্পত্তি উনি দেখাননি! লুকিয়ে গেছেন।” তবে, হিরণ অবশ্য কারুর নাম নেননি! হিরণ জানিয়েছেন, “ওঁর নাম নিইনা আমি। আপনারা সবাই জানেন। খড়্গপুর বাসী জানেন, কার কথা বলছি! আপনারাও জানেন।”
এদিন, আরও বিস্ফোরক অভিযোগ এনে হিরণ জানিয়েছেন, “ওঁর সম্পর্কে বলি বলে, আমাকে জেল থেকে মাফিয়ারা ফোন করে হুমকি দেয়। আমি নাকি বেশি কথা বলে ফেলছি!” যেকোনো দিন তাঁকে ‘মার্ডার’ করা হতে পারে বলেও অভিযোগ হিরণের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের বাড়ি ও সম্পত্তি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন হিরণ ওরফে বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়। এদিনও বললেন, “রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। আঙ্গুলের চুটকি মারলে বাথরুমের, গ্যারাজের দরজা খোলে। আমি জানতামনা, এখানকার লোকেরাই আমাকে বলেছে।” এরপরই হিরণের অভিযোগ, “এত টাকা আসে কোথা থেকে? কয়েক হাজার গুণ ইনকাম বাড়ে কিভাবে? গরীব মানুষকে লুট না করলে, এত টাকা হয়না! সেজন্যই মানুষ ওঁকে ২০২১ সালের নির্বাচনে পর্যদুস্ত করেছেন। রিগিং করে, ভোট লুট করে, মানুষকে ভয় দেখিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে জিতেছে।” হিরণের মারাত্মক অভিযোগ, “চন্দ্রকোনা রোডে অবৈধভাবে কেটে ফেলা হাজার হাজার গাছও খড়্গপুরের উপর দিয়ে পাচার হয়েছে। উনিও কোটি কোটি টাকা কাটমানি খেয়েছেন!” হিরণের মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রদীপ সরকার অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি! তাঁর মতে, “নাম ধরে বলুক, জবাব দিয়ে দেব!” জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক অজিত মাইতি বলেছেন, “হিরণের কথার গুরুত্ব নেই। কখন কি বলে ঠিক নেই। ওর যদি এতোই অভিযোগ, ওদের দলের হাতেই তো ইডি, সিবিআই; জানিয়ে দিক। বিজেপি নেতা হলে ছাড়া পাওয়া যায়, তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেই তো ষড়যন্ত্র! আর, ও এখনও রাজনীতিতে এতো বড় নেতা হয়ে যায়নি, ওকে কেউ জেল থেকে হুমকি দেবে। নিজেকে একটু বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে আসলে!”