দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৮ আগস্ট: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে জেলে যেতে হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যা-কে। তাঁর অন্তত ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি’র হদিস পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যে। এর মধ্যেই, শাসক দলের আরও ১৯ জন নেতা-মন্ত্রী-প্রাক্তন মন্ত্রী-বিধায়কদের সম্পত্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠ গেল কলকাতা হাইকোর্টে! সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে আইনজীবী শামিম আহমেদ (সিনিয়র অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের জুনিয়র) এই ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর একটি তালিকা সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব দিয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। তিনি আর্জি জানান, পাঁচ বছরে এঁদের সম্পত্তি কী ভাবে এত বাড়ল, তা খতিয়ে দেখুক ইডি। এর প্রেক্ষিতেই এই মামলায় ইডি-কে পার্টি করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭-এর এই জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে পার্টি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিউলি সাহা, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অর্জুন সিং সহ ১৯ জনের নাম আছে। এক ব্যক্তির ২০১৭ সালে করা জনস্বার্থ মামলা সোমবার নতুন করে ওঠে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে থেকে পাওয়া নেতা বা মন্ত্রীদের তথ্য খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, বছরের পর বছর কী ভাবে সম্পত্তি বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি, দুর্নীতি মামলায় ইডি গ্রেফতার করার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একের পর এক সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে অন্তত ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ইডি সেই মামলার তদন্ত করছে। আর, তার মধ্যেই এই জনস্বার্থ মামলায় ইডি (ED)-কে পার্টি করার নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সূত্রের খবর অনুযায়ী এই ১৯ জন হলেন- শোভন চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মলয় ঘটক, অর্জুন সিং, গৌতম দেব, ইকবাল আহমেদ, ফিরহাদ হাকিম, স্বর্ণকমল সাহা, ব্রাত্য বসু, অরূপ রায়, জাভেদ খান, অমিত মিত্র, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সুব্রত মুখোপাধ্যায় (প্রয়াত মন্ত্রী), সাধন পাণ্ডে (প্রয়াত মন্ত্রী), রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, শিউলি সাহা, সব্যসাচী দত্ত। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে আইনজীবী শামিম আহমেদ জানান, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। শামিম আদালতকে জানিয়েছেন, এঁদের অনেকেরই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। এর মধ্যে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সব্যসাচীর আয় বেড়েছে ৪১৬ শতাংশ। জাভেদের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৪৭৩৪ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে আবার এঁদের স্ত্রী’রা তেমন ভাবে কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের সম্পত্তি পাঁচ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫০ শতাংশের বেশি! অভিযোগ, হু হু করে সম্পত্তি বেড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা’রও। তবে, এই বিষয়ে এখনও তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।