তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন: মে মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের (মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত) প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কড়া ভাষায় PWD- দপ্তরকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, “বাপরে বাপ খাঁই কত! দুটো গেট আর একটা কমিউনিটি হলে ৩২ কোটি! আমি যেন কাজ করাইনা।” এরপর তিনি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঘাটালে বর্ণপরিচয় গেট, বীরসিংহ গেট এবং একটি কমিউনিটি হলের জন্য সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে, পূর্ত দফতরের হাত থেকে কাজকর্ম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, “কিচ্ছু কাজ করে না। শুধু টাকার খাঁই! ওদেরকে দিয়ে সব কাজ করানোর দরকার নেই।” দেখা খেল, সেই পূর্ত দপ্তর বা পিডব্লিউডি’র কাজ চলাকালীনই বিদ্যাসাগরের বীরসিংহ গ্রামে তাঁর নিজের হাতে তৈরি ভগবতী বিদ্যালয়ের পুরানো ভবন-টি ভেঙে পড়ল। এই ভবন-টিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছিলেন। আর, এই ভবনটিই সংস্কারের কাজ করছিল পূর্ত দপ্তর (p.w.d.)। সোমবার সন্ধ্যার মুখে কাজ চলাকালীন ভেঙে পড়ে ভবনের বৃহৎ একটি অংশ।
জানা গেছে, সোমবার (৪ জুলাই) সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ভেঙে পড়ে বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ের পুরানো মাটির ছাত্রাবাস। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ জানালেন, “১৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই ভবন। প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ হিসাবেই ব্যাবহার হত এই ভবন। পরবর্তী কালে, অফিসের কাজ শুরু হয়। তারপরে, এটি পুরোপুরি ছাত্রাবাস হিসাবেই ব্যাবহার হয়ে এসেছে। ছাত্রাবাসের নতুন বিল্ডিং নির্মিত হওয়ায় এবং ছাত্রাবাসের ছাত্র কমে যাওয়ার ফলে এই মাটির ভবন দুটি দীর্ঘদিন অব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে বীরসিংহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বি-শত জন্মবার্ষিকীর সূচনা পর্বে এই মাটির ভবন দুটিকে হেরিটেজ বিল্ডিং ঘোষণা করেন। দীর্ঘ একবছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কারের কাজ চলছিল। ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এই বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি শঙ্কর দোলই সন্ধ্যা নাগাদ জানিয়েছেন, “আমরা এই কাজের বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে! আমি ডিএম- কে এইমাত্র ফোনে বিষয়টি জানালাম। উনি আগামীকাল (মঙ্গলবার) এডিএম- কে পাঠাবেন বলেছেন খতিয়ে দেখতে।” প্রধান শিক্ষক প্রদীপ পাঠকের মন্তব্য, “ঘাটালবাসীর আবেগ ও ঐতিহ্যের এই বিদ্যালয়ে এই যে কাজ চলছে, সেই সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার কাছে নেই। আমাকে কয়েকদিন আগে মেদিনীপুরেও একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি কোন সদুত্তর দিতে পারিনি!” ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত রায়, যিনি পরিচালন কমিটির সদস্য তিনি জানিয়েছেন, “আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে! যতবার জানার চেষ্টা করেছি, ততবার এই কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা উত্তর দিয়েছেন, আমরা কিছু জানিনা! এজেন্সি মারফত কাজ হচ্ছে অথচ কোন এজেন্সি, কত টাকার কাজ, প্ল্যান সবই আমাদের অজানা।” মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, “বীরসিংহের এই কাজটি PWD দেখছে। বীরসিংহ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দেখছে না! তবে, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করছি। কারণ, মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত এই বিদ্যালয়-ভবন সমগ্র মেদিনীপুর বাসীর কাছেই অত্যন্ত আবেগের।” এই বিষয়ে পূর্ত দপ্তরের এক আধিকারিককে ফোন করা হলেও, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি! তবে, ঘটনা ঘিরে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ঘাটাল তথা মেদিনীপুরবাসী।