দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ জুন: তিনি অনয় মাইতি। পেশায় ব্যবসায়ী, নেশায় সমাজকর্মী। জেলা শহর মেদিনীপুর এখন এক ডাকে চেনে এই মানবদরদী মানুষটিকে। তাঁর ৯ নং ওয়ার্ডের (কর্ণেলগোলা ও সংলগ্ন এলাকা) বাসিন্দারা তো একবাক্যে বলেন, “শীত গ্রীষ্ম বর্ষা অনয়দা-ই আমাদের ভরসা!” তবে, অতিমারী থেকে সাইক্লোন, ঘর ভেঙে যাওয়া থেকে দাহ করতে না পারা- অসহায়, আর্ত মানুষের ডাকে প্রতিটি মুহূর্তে যেভাবে তিনি ওয়ার্ড ছাড়িয়ে শহরে, শহর ছাড়িয়ে গ্রামে পৌঁছে যান- তাতে এখন আর শুধু ওয়ার্ডবাসী নন, আপামর মেদিনীপুর বাসীর মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন কর্ণেলগোলা’র বাসিন্দা তথা ৯ নং ওয়ার্ড নাগরিক উন্নয়ন সমিতির সভাপতি অনয় মাইতি। রবিবার (৫ জুন), নিজের ৫০- তম জন্মদিনেও তাই ব্যতিক্রমী অনয়! সরোজ দাস, সুরজিৎ সরকার সহ বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট ময়দানের ঠিক উল্টো দিকে মেদিনীপুর টাউন হ্যান্ডিক্যাপ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রাঙ্গণে। সেখানেই পালিত হল জন্মদিন। আড়ম্বর হল, উৎসব হল, আনন্দ হল- তবে সবটাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতীদের নিয়ে। হাসি ফোটালেন জীবনভর হাঁটতে না পারা, কথা বলতে না পারা ছেলেমেয়েদের মুখে।
দুটি পা-ই অচল মেদিনীপুর শহরের বিশ্বজিৎ মিদ্যা’র। বছর ৪৫ এর বিশ্বজিৎ এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও সংসার টানছেন দোকান চালিয়ে। অনয় মাইতি’র কাছে তিনি চেয়েছিলেন একজোড়া ক্রাচ। কর্মনিষ্ঠ বিশ্বজিতের হাতে নিজের ৫০ তম জন্মদিনে অনয় তুলে দিলেন সেই ক্রাচ। রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর টাউন হ্যান্ডিক্যাপ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাকক্ষে বিশ্বজিৎ যখন ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন, প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেও হাততালিতে ফেটে পড়লেন সকলে! আর, হাসিমুখে বিশ্বজিৎকে জড়িয়ে ধরলেন মনে হয়। কিশোরী প্রিয়াঙ্কা সিং, একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী। সেও এগোতে চায়, দু’চোখ ভরে এই পৃথিবী দেখতে চায়। তাঁর হাতে অনয় মাইতি তুলে দিলেন ট্রাইসাইকেল। একইভাবে, বুবাই মাহাত পেলেন হুইল চেয়ার। এক প্রৌঢ়া পেলেন ওয়াকার। উপহার পেলেন সকলে। আপ্লুত মেদিনীপুর টাউন হ্যান্ডিক্যাপ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির দায়িত্বে থাকা অলক কুমার ঘোষ। মঞ্চে তখন বসে মেদিনীপুর পৌরসভার তিন কাউন্সিলর, যথাক্রমে- তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী ও টোটন শাসপিল্লি এবং সিপিআইএমের সৃজিতা দে বক্সী’রা বললেন, “অনয়-দাই পারেন এমনভাবে জন্মদিন পালন করতে। সকলকে মিলিয়ে দিতে।” আর, কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব (সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য) ও সমাজকর্মী তাপস সিনহা বা সমাজকর্মী দুলাল দত্তরা বললেন, “অনয়ের ডাকে আমরা সবসময় ছুটে আসি, ভবিষ্যতেও আসবো।” চিরপরিচিত ট্রেড মার্ক হাসি হেসে অনয় মাইতি শুধু বললেন, “এই ভালোবাসা, এই আশীর্বাদ- টুকুই তো জীবনের সবথেকে বড় পাওনা। মাত্র একবছর আগেই একপ্রকার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি মানুষের আশীর্বাদ আর ভালোবাসাতেই। এভাবেই তাই বাকি জীবনটুকুও নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে থাকতে চাই, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।”