তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মে: “অবশেষে আমার দিদির আত্মা শান্তি পেল। দিদিকে তো আর ফিরে পাবনা, তবে, ওর খুনিদের যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দেখার অপেক্ষাতেই ছিলাম!” ঘাটাল মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এমনটাই বললেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার বাসিন্দা সুমন রায়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০০ সালে ডেবরা থানা এলাকার (চককিশোরপুর) বাসিন্দা রুমা রায়ের সঙ্গে দাসপুর থানার বাসিন্দা নির্মল রায়ের বিয়ে হয়। তাদের এক কন্যা সন্তানও আছে। কিন্তু, বিয়ের পর থেকেই রুমা’র উপর অত্যাচার করা হতো বলে, অভিযোগ। এরপর, ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট রুমা’র স্বামী নির্মল রায় তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। বাপের বাড়ির লোক দাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, স্বামী নির্মল রায়, শাশুড়ি প্রভাবতী রায়, ননদ মলিনা সিংহ, ভাসুর প্রদ্যোৎ রায় এবং প্রদ্যোৎ রায়ের স্ত্রী তপতী রায়ের বিরুদ্ধে। সকলের বিরুদ্ধেই রুমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন (বধূ নির্যাতন), হত্যার চক্রান্ত এবং প্রাণে মেরে ফেলার অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে শুরু করে দাসপুর থানার পুলিশ। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয় এবং পরে জামিন পান। এদিকে, গত প্রায় ৯ বছর ধরে ঘাটাল আদালতে সেই মামলা চালিয়ে যান রুমার বাবা, মা ও ভাই। অবশেষে, মঙ্গলবার চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করেন বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা। ৫ জনেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

thebengalpost.net
স্বামী সহ ৫ জনের যাবজ্জীবন:

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট রুমার মৃতদেহ দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় রুমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। খবর যায়, রুমা রায়ের বাপের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেবরা এলাকায়। গৃহবধূর বাপের বাড়ির পক্ষ থেকে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির পাঁচজন সদস্যের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগে এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয় দাসপুর থানায়। অভিযোগ পেয়ে, দাসপুর থানার পুলিশ মৃত গৃহবধূর স্বামী, শাশুড়ী সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে এবং ঘাটাল মহকুমা আদালতে তোলা হলে তিন মাস পর তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। দীর্ঘ ৯ বছর পর, আজ, মঙ্গলবার, দাসপুরের গৃহবধূ রুমা রায়-কে খুন করার অপরাধে স্বামী নির্মল রায়, শাশুড়ি প্রভাবতী রায় সহ শ্বশুরবাড়ির মোট ৫ জন সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন ঘাটাল মহকুমা আদালতের বিচারক। দশ হাজার টাকা করে জরিমানাও ঘোষণা করা হয়। রুমা রায়ের বাবা (সুকুমার রায়) ও মা আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা খুব খুশি! আমাদের মেয়েকে তো আর ফিরে পাবোনা, অন্তত খুনিদের যথাযথ শাস্তি দিয়েছে আদালত। এই দিনটার অপেক্ষাতেই আমরা ছিলাম।”

thebengalpost.net
শাস্তি পেলেন অশীতিপর শাশুড়িও :