দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ মে:বেআইনিভাবে হাজার হাজার গাছ কেটে তা কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পৌঁছেছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরে। স্বয়ং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান (বা, অঞ্চল প্রধান) সহ শাসকদলেরই সব ‘জাঁদরেল’ নেতানেত্রী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার ওই গাছ পাচার কাণ্ডে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। কিন্তু, ‘ততদূর’ অবধি হাত পৌঁছচ্ছিল না জেলা পুলিশের! সম্প্রতি (২৭ এপ্রিল) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ‘নবান্ন’ থেকে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ভার্চুয়ালি জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার-কে নির্দেশ দেন, যতবড়োই নেতা হোক না কেন, গ্রেপ্তার করতে হবে। অবৈধভাবে বা নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে, দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই নড়েচড়ে পুলিশ! দুই থেকে বেড়ে (জামিন পেয়ে যাওয়া কাঠ মিলের মালিক গোলাম মহম্মদ সহ) গ্রেপ্তারির সংখ্যা রাতারাতি হয় ৫। এবার, সেই তালিকায় যুক্ত হল ‘এখনও পর্যন্ত’ সবথেকে বড় নাম। তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান (অঞ্চল প্রধান) ইব্রাহিম খান-কে উড়িষ্যা (ওড়িশা) থেকে গ্রেফতার করে আনল জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। মুখ্যমন্ত্রী’র জেলা সফরের (১৭-১৮ মে) আগে যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিকে, এই ঘটনায় এখনও অবধি মোট গ্রেপ্তার হওয়া অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে হল ৬।

thebengalpost.net
নির্বিচারে কাটা হয়েছিল গাছ :

প্রসঙ্গত, গড়বেতা ৩ নং ব্লকের অন্তর্গত কড়সা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্যানেল পাড়ে বা বীরঘষা ক্যানেল পাড়ে ২৭০-টি ইউক্যালিপটাস গাছের টেন্ডার নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গাছ কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিন কোটি টাকার দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ! অঞ্চল, ব্লক থেকে শুরু করে এলাকার সবথেকে বড় নেতা-নেত্রীরাও এই কাণ্ডে জড়িত আছে বলে সিপিআইএম জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ এবং বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাসের অভিযোগ। সম্প্রতি, প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসক রশ্মি কমলের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “তোমার ওখানে গাছ কাটা নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বনদপ্তরের গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।” এরপর, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার-কে তিনি নির্দেশ দেন, “বেআইনিভাবে গাছ কাটা, বালি উত্তোলন হোক কিংবা কোনও রকম দুর্নীতি, আমি পরিষ্কার বলছি রঙ দেখার দরকার নেই। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে ব্যবস্থা নাও। আমাদের পক্ষ থেকে কেউ বাধা দেবে না। কারণ কথাটা আমি বলছি, অন্য কেউ নয়।” তিনি এও বলেন, গাছ পাচার কাণ্ডে যদি কোনও বড় নেতাও জড়িত থাকে, তাকে রেয়াত করা হবে না।

thebengalpost.net
অবৈধভাবে গাছ কাটার ঘটনা :

তারপরই, একের পর এক তৃণমূল নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয় স্থানীয় বনাঞ্চল আধিকারিক বা রেঞ্জ অফিসারের বিরুদ্ধেও। দিনসাতেক আগেই, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মইদুল খাঁ এবং তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রাজীব ঘোষ-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলা পুলিশ। এরপরই, গ্রেফতার হন মইদুল। তবে, ছাড় পেয়ে যান রাজীব! এবার, মুখ্যমন্ত্রীর পশ্চিম মেদিনীপুর সফরের মাত্র ৫ দিন আগে, তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ইব্রাহিম খান-কে গ্রেফতার করে তদন্তের জাল গোটানোর ইঙ্গিত দিল জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার সাংবাদিকদের জানান, “গড়বেতায় অবৈধভাবে গাছ কাটার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইব্রাহিম খান-কে ওড়িশা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এখন শুধু এটাই দেখার, এই কাণ্ডে আরও কোনো বড় নেতা-নেত্রী বা জনপ্রতিনিধির নাম উঠে আসে কিনা বা মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে এই বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশ দেন কিনা!

thebengalpost.net
ইব্রাহিম খান (ফাইল ছবি):