দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ মে:”আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে/ অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে!” একসাথে পথচলা শুরু সাত বছর আগে। ‘বিবাহ’ নামক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পরকে সমৃদ্ধ করেছেন জেলা শহর মেদিনীপুরের শিক্ষক ও সমাজকর্মী মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত এবং স্ত্রী চন্দনা সামন্ত। দু’জনের মাঝে এসেছে মেয়ে ঐশী। সম্পর্কের বয়স সাত বছর পেরিয়ে আটে পা দিল।‌ মেয়েও দেখতে দেখতে পাঁচের পথে। আপাত সুখের সংসার, তাই নিজেদের সপ্তম বিবাহবার্ষিকী-টা অনায়াসেই আড়ম্বরের সঙ্গে কাটাতে পারতেন মৃত্যুঞ্জয়-চন্দনা! কিন্তু, তা করেননি। এই কঠিন সময়ও বোধহয় তা দাবি করেনা! তা অনুভব করেছেন সমাজকর্মী মৃত্যুঞ্জয় ও তাঁর স্ত্রী। অতিমারীর দুর্বিষহ যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠে যে সমাজ সদ্য স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা শুরু করেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের করাল গ্রাসে হাঁসফাঁস করছে যে প্রকৃতি, গ্রীষ্মকালীন রক্তসঙ্কটে ভুগছে যে শহর- সেখানে তাই কোনো আড়ম্বর বা উৎসব নয়; আয়োজন করা হয়েছে রক্তদানের, উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে সজীব চারাগাছ আর অঙ্গীকার করা হয়েছে মরণোত্তর দেহদানের।

thebengalpost.net
রক্তদান করলেন মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং সমাজকর্মী কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী :

সোমবার (২ মে) তাঁদের বিবাহবার্ষিকী হলেও, সকল আমন্ত্রিত অতিথিদের সুবিধার্থে রবিবার (১ মে) ঐতিহ্যমণ্ডিত মেদিনীপুর শহরে এভাবেই নিজেদের সপ্তম বিবাহবার্ষিকী পালন করলেন, মেদিনীপুর শহরেরই বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত এবং চন্দনা সামন্ত। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই রক্তদান করলেন। অঙ্গীকার করলেন, মরণোত্তর দেহদানের! মরণের ওপারেও নশ্বর দেহ ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ হয়ে থাকুক, মেদিনীপুরের পবিত্র মাটি থেকে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য মৃত্যুঞ্জয়দের। অনুষ্ঠানটিকে সমৃদ্ধ করেছিল সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও গুনীজন সংবর্ধনাও। সঙ্গে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রতীক হিসেবে সজীব চারাগাছ। ছিল অতিথিদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও। শুধু তাই নয়, মেদিনীপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ৫০-টি পথশিশুর কাছেও পৌঁছে গিয়েছে সেই খাবার! সবমিলিয়ে এক অনন্য-সুন্দর আয়োজন। রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী মায়াধীশানন্দ ছাড়াও বিধায়ক দীনেন রায়, সমাজকর্মী সুজয় হাজরা, প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌস্তুভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাউন্সিলর ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, শিক্ষক ও সমাজকর্মী শান্তনু দে, শিক্ষাবিদ ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুনীজন তথা অতিথিরা তাঁদের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছিলেন। উৎসাহিত করলেন রক্তদাতাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শুভদীপ বসু। সমগ্র অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী, ফাকরুদ্দিন মল্লিক, মণিকাঞ্চন রায়, সুদীপ কুমার খাঁড়া প্রমুখরা। স্মরণীয় মে দিবসের দিন জেলা শহর মেদিনীপুরের রেডক্রশ সোসাইটি হলে এক সর্বাঙ্গসুন্দর আয়োজনে মুগ্ধ হলেন উপস্থিত সকলে।

thebengalpost.net
দেহদানের অঙ্গীকার: