দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ মে: শাসকদলের বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক যুবনেতাকে গ্রেফতার করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানা। কলেজ ছাত্রীর’ব্যক্তিগত’ ছবি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। বিরোধীদের দাবি, বিধায়কের ‘আশীর্বাদের হাত’ নাকি যুবকের মাথায় সবসময় ছিল! সেই পরিচয় ভাঙিয়েই এক কলেজ ছাত্রীর মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি নিয়ে, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বেলদা থানা এলাকার ওই যুবকের বিরুদ্ধে! সম্মানহানির কারণে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই কলেজ ছাত্রী একটা সময় আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। পরে বন্ধুদের পরামর্শে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওই তরুণী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরেও অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং বেঙ্গল পোস্ট ডিজিটাল মাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই, শাসকদলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছিলেন, “এই ধরনের অন্যায়ের ক্ষেত্রে, সুস্পষ্ট অভিযোগ এলেই পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” তারপরই, বেলদা থানার পুলিশ নড়েচড়ে বসে। ওই ছাত্রীও পুলিশের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে, লিখিত অভিযোগ করেন। রবিবার রাতে জেলা পুলিশের নির্দেশে যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ধৃত যুবকের নাম, আব্দুল ফরিদ শাহ। সোমবার তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি (২৭ এপ্রিল), ‘নবান্ন’ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেকোনো ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রঙ, প্রভাব প্রভৃতি না দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারপরই, জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, “দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধ মূলক কাজকর্মের ক্ষেত্রে কোনরকম আপোষ করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী’র কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ কিংবা আপনাদের কাছেও যেকোনো ধরনের দুর্নীতি বা অপরাধের খবর থাকলে, দ্রুত জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন। পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” এদিকে, ওই তরুণীও এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, প্রভাবশালী ওই শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে। এরপর, গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই, মানসিকভাবে ‘নির্যাতিত’ ওই তরুণী’র বাড়িতে যায় বেলদা থানার পুলিশ। বিভিন্ন মহল থেকেই তরুণীকে আশ্বস্ত করা হয়। এমনকি, ওই বিধায়কও একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অন্যায় করলে নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। এরপরই, ওই তরুণী বেলদা থানায় লিখিত অভিযোগ করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অবশেষে, রবিবার রাতে অভিযুক্ত আব্দুল ফরিদ শাহ-কে বেলদা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার-ই তাকে আদালতে তোলা হবে। এদিকে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বেলদার বিধায়ক সূর্য কান্ত অট্টের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, তিনি সাড়া দেননি! তবে, জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে পুলিশ নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে। আইন আইনের পথে চলবে। কে কার ঘনিষ্ঠ এসব কোনো প্রভাব পড়বে না!” যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ জানিয়েছেন, “ওই যুবক যুব সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। আর, নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ অনেকেই থাকতে পারে। কিন্তু, অন্যায় করার কথা কেউ কাউকে বলেন না! আর, এর সঙ্গে দলেরও কোনো সম্পর্ক নেই।”
ঘটনাচক্রে জানা যায়, ওই তরুণী একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একজন বিধায়ক (তখনও বিধায়ক নির্বাচিত হননি, বিধায়ক হওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন) পদপ্রার্থী’র দলীয় কার্যালয়ে খোলা ‘কল সেন্টার’ (সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার জন্য) এ কাজ নিয়েছিলেন নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের চুক্তিতে। ওই তরুণী এবং তাঁর এক সম্পর্কিত বোন কাজ নিয়েছিলেন। আর, ওই কার্যালয়েই সর্বক্ষণ থাকত, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ, অভিযুক্ত ওই যুবক। দু’একদিনের মধ্যেই যুবকের অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন তরুণী। তারপরই কাজ ছেড়ে দেন। তবে, ততদিনে ওই তরুণীর মোবাইল থেকে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি যুবক নিয়ে নেয় বলে তরুণী’র অভিযোগ। এরপর, চলে মেসেজে নানা প্রস্তাব দেওয়ার পালা! তারপর, তরুণী ওই যুবককে ব্লক করে দেন নিজের সমাজ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থাকে। এরপরই, তরুণী’র ‘আপত্তিকর’ ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করে দেয় ওই যুবক! এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে একটি ভিডিও বার্তায় তরুণী তাঁর পরিচিতদের জানিয়েছিলেন, “গত ১৩ মার্চ আমার এক মাসতুতো বোনের কাছে জানতে পারি যে, আমার কোনো ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখি, সত্যিই ছবিটা ভাইরাল হয়েছে। বুঝতে পারি, কে বা কারা করেছে! এরপরই, আমি ফোন করি। তখন আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, আমি বাড়াবাড়ি করছি কেন? আমার আরও বড় ক্ষতি করে দেবে।” তারপরই, বাড়ি থেকে মেদিনীপুর শহরের মেসে এসে ওই তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেই জায়গা থেকে বন্ধুরা ফিরিয়ে আনেন। তাঁদের পরামর্শেই ওই তরুণী প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরে এবং পরে বেলদা থানায় অভিযোগ জানান।