দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ এপ্রিল: দু’জনই শিল্পী। সঙ্গীত-ই ছিল তাঁদের মন-প্রাণ-হৃদয়। বছর ছয়েকের বয়সের ব্যবধান হলেও, এই সঙ্গীত আর শিল্প চর্চা-ই দু’জনকে অভিন্ন হৃদয় বন্ধুতে পরিণত করেছিল। সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়লো না মরণের ওপারেও! একই দিনে (২৪ এপ্রিল), মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মৃত্যু হল, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা, বছর ৪৩ এর সঙ্গীতশিল্পী ও নাট্যকর্মী সম্ভ্রম চক্রবর্তী (টিটো) এবং বছর ৪৯ এর সঙ্গীতশিল্পী ও তবলা বাদক সোমেশ কুমার হড় (সোম)- এর। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, দু’জনই প্রায় একই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণ করলেন, মাত্র কয়েকঘন্টার ব্যবধানে। প্রথমে বমি এবং তারপর হৃদযন্ত্র বিকল (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) হয়ে, রবিবার (২৪ এপ্রিল) মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয় দু’জনের। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণেই মৃত্যু কিনা জানতে, তাঁদের দেহ ময়নাতদন্ত (Postmortem) করা হতে পারে বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাতে বাড়ি ফিরে টিটো (সম্ভ্রম) এবং সোম (সোমেশ) দু’জনই অসুস্থতা বোধ করেন। রাতের খাবার খাওয়ার পরই দু’জনের বমি শুরু হয় প্রায় একই সময় থেকে। রাত্রি সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ সম্ভ্রম (টিটো)-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত্রি দেড়টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর! তবে, রাত্রি এগারোটা নাগাদ বমি শুরু হলেও, সারা রাত বাড়িতেই সাধারণ চিকিৎসা করা হয় সোমেশের ক্ষেত্রে। ওআরএস এবং গ্যাসের সাধারণ ওষুধপত্র দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তাতে কোনো কাজ না হওয়ায়, ভোর চারটা নাগাদ তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসেন বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা। রবিবার ভোর সাড়ে চারটা-পাঁচটা থেকে চিকিৎসা শুরু হয় সোমেশের।‌ প্রথমে তাঁকে সাধারণ মেল মেডিসিন ওয়ার্ডেই রাখা হয়। চিকিৎসা শুরুর পর শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীলও হয়ে যায়। কিন্তু, দুপুরের পর থেকে ফের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে! বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ তাঁকে আইসিইউ (ICU)- তে দেওয়া হয়। তবে, সব চেষ্টা ব্যর্থ করছ, মাত্র কয়েকঘন্টা পরই রবিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় মেদিনীপুর শহরের সুপরিচিত সংগীতশিল্পী, তবলা বাদক ও তবলা প্রশিক্ষক সোমেশ কুমার হড় (৪৯) এর!

thebengalpost.net
সোমেশ কুমার হড় :

এদিকে, আকস্মিক এই ঘটনায় শহরবাসী একদিকে যেমন শোকে মুহ্যমান, ঠিক তেমনই বিস্মিত! কিভাবে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে, দুই শিল্পী এবং অভিন্নহৃদয় বন্ধুর- একই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হতে পারে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা মেদিনীপুর শহর জুড়ে। প্রসঙ্গত, টিটো মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজারের (১৯ নং ওয়ার্ডের) বাসিন্দা এবং সোমেশ মেদিনীপুর শহরের নজরগঞ্জের (২০ নং ওয়ার্ডের) বাসিন্দা। দু’জনই কন্যা সন্তানের পিতা এবং দুই কন্যাই বাবাদের মতো প্রতিভাময়ী সঙ্গীতশিল্পী। টিটোর মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর (শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের) ছাত্রী এবং সংগীতচর্চায় পারদর্শী। অন্যদিকে, সোমেশের মেয়ে সঙ্গীত নিয়েই কলকাতায় পড়াশোনা করছেন। রবিবার এই দুঃসংবাদ পেয়ে বিকেল নাগাদ বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে। সোমেশের স্ত্রী মিঠু হড়-ও জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত শিক্ষিকা। দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যথাক্রমে, বিশ্বনাথ পান্ডব (১৯ নং) এবং প্রতিমা দে (২০ নং)-ও এই ঘটনায় বিস্মিত ও শোকস্তব্ধ। এদিকে, চিকিৎসকেরা সোমেশ কুমার হড়ের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে, টিটো (সম্ভ্রম)-র দেহ ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ-কেই ‘দান’ (মরণোত্তর দেহদান) করা হয়েছে পরিবারের তরফে। তাই, সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে তাঁর দেহেরও ময়নাতদন্ত করা হবে কিনা! যদিও, তেমনটাই চাইছেন, এলাকার দুই কাউন্সিলর থেকে শুরু করে আপামর মেদিনীপুরবাসী। প্রাথমিক অনুমান, খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত কারণে দু’জনই অসুস্থ এবং পরে, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। দু’জনের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে, হতে পারে দু’জনই শনিবার বিকেল বা সন্ধ্যায় একই হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে থাকতে পারেন! এই জল্পনা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ হল, দু’জনই শনিবার বিকেল নাগাদ খড়্গপুরের দিকে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে, একসাথে গিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে কেউই‌ নিশ্চিত নন! বরং সন্ধ্যা নাগাদ টিটোর ওষুধ দোকানে (বটতলাচকে) দোকানে দু’জনকে কিছুসময়ের জন্য একসাথে দেখেছেন পাশাপাশি দোকানের কয়েকজন! আর সেজন্যই, দাবি উঠেছে সঠিক তদন্তের। আপাতত সেদিকেই এগোচ্ছে বিষয়টি। এনিয়ে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “দু’জনেরই ময়নাতদন্ত করতে আমাদের আইনত কোন সমস্যা নেই। চিকিৎসকেরা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই পরিবার-পরিজন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে পুরো বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে।”

thebengalpost.net
সম্ভ্রম চক্রবর্তী (টিটো) :