মণিরাজ ঘোষ, খড়্গপুর, ১৭ এপ্রিল: ষষ্ঠীর দিন ‘দুর্গা’ রূপেই এসেছিল! ফিরিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, সাদরে বরণ করে নিয়েছিলেন চিকিৎসক, নার্সরা। জঙ্গলের কাছে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে বা আস্তাকুঁড় থেকে পাওয়া গিয়েছিল বলে, ওর নাম রাখা হয়েছে- অরণ্যা। তবে, আদর করে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওকে দুর্গা বলেই ডাকেন। কুড়িয়ে পাওয়া সেই সদ্যজাত শিশুকন্যা গত ছ’মাস ধরে পরম স্নেহ আর যত্নে লালিত পালিত হচ্ছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ভালোবাসা আর আন্তরিকতার সাথে আজও তার পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, আয়া সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, “মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে গেছি!” তাই, গত ১১ এপ্রিল মহকুমা হাসপাতালে ওর ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর, ছোট্ট করে অন্নপ্রাশনের আয়োজনও করেছিলেন চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালের তৎকালীন সুপার (সদ্য বদলি হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবেন আলিপুরদুয়ারে) ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় শনিবার হাসপাতালে বসে বললেন, “২০২১ এর ষষ্ঠীর দিন (১১ অক্টোবর) খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ ঝোপ জঙ্গল (মালঞ্চার কাছে) থেকে ওকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। তখন ওর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল ছিল। আমরা শিশুটিকে আমাদের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে (Pediatric Ward) পাঠাই। সেই মুহূর্ত থেকেই পরম যত্নে ওর চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসক অরবিন্দ মাহাত, ইন্দ্রাণী মন্ডল, কে.কে দাস- প্রমুখরা। বিশেষত, ডাঃ মাহাত ওকে দায়িত্ব নিয়ে এখানেই রাখেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমাদের হাসপাতালের শিশু বিভাগের অন্যান্য চিকিৎসক এবং অবশ্যই নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওর নাম রাখা হয়েছে, অরণ্যা। ওঁরাই অরণ্যা-কে দুধ খাওয়ানো, ওষুধপত্র খাওয়ানো প্রভৃতি সবকিছু করেন। ওদের আবেদনেই ছোট করে ওর অন্নপ্রাশনের আয়োজনও করা হয়েছিল।”
তবে, ডাঃ মুখোপাধ্যায় এও জানান, “শিশুটি একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। ওর মাথায় জল জমে আছে। ক্রমে তা বাড়ছে। এই রোগটিকে ‘হাইড্রোকেফালাস’ (Hydrocephalus) বলে। এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। ওকে এনআরএস এবং পিজি-তে ভর্তি করার জন্য আমরা চেষ্টাও করেছি। তবে, পারিনি। এজন্য আমি জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আবেদনও জানিয়েছি।” আশ্বাস দিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “শিশুটিকে আমরা শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করতে চাইছি। সেজন্য, ন্যাশনাল হেলথ মিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।” আর, শিশুটির একপ্রকার অভিভাবক হয়ে ওঠা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অরবিন্দ মাহাত বললেন, “ওর মাথায় জল জমে রয়েছে। এটা নার্ভের একধরনের রোগ। আমরা এনআরএসে (নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) ভর্তি করার জন্য পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু হয়নি। তাই, সুপার স্যারের মাধ্যমে আবেদন করা ছাড়াও, আমি নিজেও অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি।” অপরদিকে, অরণ্যা-কে মাতৃস্নেহে লালন পালন করা, নয়নতারা রায়, স্বপ্না গঙ্গোপাধ্যায়, তনুশ্রী পাল, অঞ্জলি দাস, বিনোদিনী মাইতি- প্রমুখ নার্সরা বললেন, “দুর্গার সঙ্গে আমরা মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি। তবে সবার আগে প্রয়োজন ওকে বাঁচানো। তাই, ওকে কলকাতায় পাঠাতেই হবে। দ্রুত ওর চিকিৎসা শুরু হোক এটাই চাই।” আপাতত, আপামর খড়্গপুরবাসীও অরণ্যা (দুর্গা)’র সুস্থ-সুন্দর জীবন চাইছেন!