দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১১ এপ্রিল:না, সিবিআই রিপোর্ট দেয়নি। রিপোর্ট দিয়েছে হাইকোর্টের তৈরি করে দেওয়া রঞ্জিত কুমার বাগ কমিটি। আর, তাতেই সোমবার দুপুরের শুনানিতে হুলুস্থুল পড়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, “চাকরি পাওয়া ৬০৯ জন পাশই করেননি!” এমনই বিস্ফোরক রিপোর্ট পেশ করল তদন্ত কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই ৬০৯ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসএসসি (SSC- School Service Commission) কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও। এস.পি. সিনহার নেতৃত্বাধীন তাঁর তৈরি করা সুপারিশ কমিটি-ই নাকি ‘বেআইনি’! এর ফলে, আরও চাপ বাড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ চার কর্তার।
উল্লেখ্য যে, সোমবারের শুনানিতে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। সেই সময় ভরা এজলাসে রিপোর্ট পেশ করেন বিচারপতি আর. কে বাগের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। এই রিপোর্ট পড়ে শোনানো হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনকেই ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছিল। কমিটির বক্তব্য, ২০১৯ সালে ১ নভেম্বর একটি সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল। তারাই গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনের প্যানেল তৈরি করেছিল। এক্ষেত্রে দফতরের প্রথম সারির বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। মূলত তাঁদের সুপারিশেই তৈরি হয়েছিল প্যানেল। আর সেগুলিকে রেজিস্ট্রারে নথিভুক্তও রাখা হয়েছিল। শর্মিলা মিত্র, সুবীরেশ ভট্টচার্য, মহুয়া মৈত্র, অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনার কথা বল হয়েছে। অন্যদিকে, সমরজিৎ আচার্য ও শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে অত্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অভিযোগ আনা হয়েছে অবৈধ সুপারিশ পত্র দেওয়ার বিষয়ে।
এদিন, মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, “টাকার লেনদেন হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে কমিটি তদন্ত করেনি। তবে কমিটি বলেছে, মানি ট্রেলের ব্যাপার তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হলে, তা খতিয়ে দেখতে পারে। এতদিন ধরে কর্তারা বলে আসছিল, কমিটির রিপোর্ট না এলে তদন্ত করা যাবে না। আজ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে স্পষ্ট বলেছে, এস.পি সিনহার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে দুর্নীতিতে। আইপিসি ৪২০ কেসে অভিযোগ রয়েছে। এরপরে আর স্বস্তির জায়গা নেই তাঁর।” এও উল্লেখ্য যে, এই ঘটনায় এতদিন পর্যন্ত কোথাও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম আসেনি। তবে এদিনের শুনানিতে এসেছে। অভিযোগ যে, নিয়োগের আগে যে সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল, তা হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মাফিক। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, “আদালত সুপারিশ কমিটি গঠনের বিষয়টিকেই বেআইনি বলেছে। কারণ কেউ এই কমিটি গঠনই করতে পারে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কমিটি কোনও সরকারি আদেশে হয়নি। মন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট সেক্রেটারি করেছেন। তাই এই কমিটিই বেআইনি।”