দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ৯ এপ্রিল:একদিকে, ৭ নং ওয়ার্ডের চার বারের কাউন্সিলর তথা সিআইসি (Chairman in Council) বা পুর পারিষদ পদের অন্যতম দাবিদার কল্যানী ঘোষ। অন্যদিকে, পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার ঘনিষ্ঠ শহর সভাপতি দিব্যেন্দু পাল। তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী পাল আবার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনিও সিআইসি বা পুর পারিষদ পদের অন্যতম দাবিদার। রেল শহরের তৃণমূল কংগ্রেসে যুযুধান এই দুই গোষ্ঠীর লড়াই দীর্ঘদিনের! ৭ নং ওয়ার্ডের একটি তৃণমূল পার্টি অফিস-কে কেন্দ্র করে সেই লড়াই এবার আরও জমজমাট হল। বলা চলে, একেবারে নগ্ন রুপে প্রকাশ্যে চলে এল! দিব্যেন্দু গোষ্ঠী’র অভিযোগ, খড়্গপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পার্টি অফিস দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলেরই কাউন্সিলর কল্যানী ঘোষ! তাঁর বিরুদ্ধে একযোগে এই অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল সভাপতি বুবুন চ্যাটার্জি থেকে শুরু করে খোদ শহর তৃণমূল সভাপতি দিব্যেন্দু পাল। অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে কল্যানী ঘোষ মন্তব্য করেছেন, “প্রায় দেড় বছর ধরে সুভাষপল্লীতে যুব তৃণমূল কংগ্রেস একটা পার্টি অফিস খুলেছে। পার্টি অফিসের নামে ওখানে যত রকমের নোংরা কাজ হয়। মেয়েদের আড্ডা, মদ-জুয়া সবকিছুই চলে। এলাকার লোকেরা আমাকে বলে, এসব জিনিস এখানে চলছে। আপনি এখানে পার্টি অফিসে বসলে এসব কমে যাবে। সেই জন্য আমি ওখানে শুক্রবার গিয়ে তৃণমূল কার্যালয় বলে একটি ব্যানার লাগাই। কিন্তু, শুক্রবার রাতে এই ওয়ার্ডের যুব সভাপতি বুবুন চ্যাটার্জী ও নোনা বলে একটি ছেলে ওই ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। সেই সময় আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের শহর সভাপতি দিব্যেন্দু পাল আমাকে ফোনে হুমকি দেয়। কেন এই কাজটা করেছো, ২০১৭ থেকে দলে এসে রাজনীতি কি এইভাবে হচ্ছে! একজন সভাপতি হয়ে আমাকে যদি এভাবে হুমকি দেয়, তাহলে আমি রাজনীতি কিভাবে করব? দল কিভাবে চালাবো? যুবদের নিশ্চয়ই উনি মদত দিচ্ছেন! ওদের সঙ্গে নিয়ে এসব করছেন।”
অপরদিকে, সাত নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বুবুন চ্যাটার্জী বলেন, “এখন যে দিদি কাউন্সিলর আছেন, উনি যখন তৃণমূল করতেন না, তখন থেকে এটা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস। উনি এখন চাইছেন, অভিষেক ব্যানার্জির ছবি থাকবে না। শুধু লেখা থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। আমাদের এখানে একটা ব্যানার লাগানো ছিল, যে ব্যানারে দিদির ছবি, অভিষেক ব্যানার্জীর ছবি দেওয়া ছিল। ওরা বিজয় মিছিলের দিন পুরো ব্যানারটা ভেঙে দিয়েছিল। পরে তারা স্বীকারও করেছিলেন মদ খেয়ে ভুল করে এই ব্যানারটা ভেঙে দিয়েছি। এই ব্যানারটা আমরা ঠিক করে দেব। তা না করে, যে ব্যানারে মমতা ব্যানার্জির ছবি নেই, অভিষেক ব্যানার্জির ছবি নেই, প্রদীপ সরকারের ছবি নেই, সেই ব্যানার লাগাতে আসে। আমরা এখানে এরকম ব্যানার লাগাতে দেব না। আসলে, আমাদের কাউন্সিলর দিদির কিছু কর্মী এই জায়গাটা দখল করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য।” ঘটনা প্রসঙ্গে, খড়গপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দিব্যেন্দু পাল বলেন, “উনি তো কংগ্রেস থেকে বছর পাঁচেক আগে তৃণমূল এসেছেন। উনি যখন তৃণমূল কংগ্রেস যোগদান করেননি, তারও আগে থেকে ওই অফিস তৃণমূল যুব কংগ্রেস চালাচ্ছিল। উনি যে অভিযোগ করছেন, ওই অফিসের মধ্যে অসামাজিক কাজ হয়, তা ভিত্তিহীন। উনি কতটা তৃণমূল, তা নিয়েই আমাদের সন্দেহ! যিনি মমতা ব্যানার্জির ব্যানার নামিয়ে দেন, তিনি আদৌ তৃণমূল করেন কিনা, সন্দেহ জাগে!” এও বলেন, “ওনাকে আমি কোনোরকম ভাবে ধমক দিইনি। আমি শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কি হয়েছিল ওখানে। তা জিজ্ঞেস করাতেই, উনি উত্তেজিত হয়ে আমাকেই উল্টোপাল্টা বলেছেন। আসলে উনি ওই অফিসটা দখল করতে চাইছেন। সাত নম্বর ওয়ার্ডকে পৈত্রিক সম্পত্তি ভেবে নিয়েছেন উনি। সাত নম্বরে যা হবে ওনাকে জিজ্ঞাসা করে করতে হবে। উনি সবকিছু করবেন। আর কেউ কিছু করতে পারবেন না। দলের সভাপতিকে উনি মানবেন না! দলের চেয়ারম্যানকেও উনি মানবেন না! আর, যুবদের তো মদত দেবই। তৃণমূলের একটা অংশই তো যুব তৃণমূল।” স্বভাবতই, পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকারের সমর্থনও দিব্যেন্দু ও তাঁর অনুগামী যুবনেতাদের পক্ষেই আছে। কারণ, খড়্গপুর তৃণমূলে প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত রবিশঙ্কর, কল্যাণী-রা। উল্লেখ্য যে, এই কল্যানী-কে সামনে রেখেই প্রদীপের বিরুদ্ধে পৌরপ্রধান পদের লড়াই জমে উঠেছিল। শেষ লড়াই প্রদীপ হাসলেও, সেই ‘লড়াই’ যে এখনও থামেনি তা বলাই বাহুল্য! এই বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তাই, পারস্পরিক বিরোধিতা কখনোই কাম্য নয়। কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি! সকলের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করছি।”