দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ এপ্রিল:”কোথাও একটা সন্ধান পেয়েছিল আমাদের বাড়িতে ৫০ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই টাকা না পেয়ে নিজের মধ্যে হিন্দিতে বলাবলি করতে থাকে যে, এই তথ্যটা যে দিয়েছিল তাকে গিয়ে ধরবো চলো।” বোঝা গেল ‘বেপথে’ চালিত হয়েছিল ডাকাতদল! মেদিনীপুর গ্রামীণ চক্রের প্রাক্তন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (SI/School Inspector) এবং বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (AI/Assistant Inspector), নিপাট ভদ্রলোক অমরেশ করের মেদিনীপুরের বাড়িতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অর্থাৎ শুক্রবার ভোররাতে পৌঁছে যায় ডাকাতদল। প্রায় ১৪ থেকে ১৫ জনের সশস্ত্র ডাকাতের দলটি জানালা কেটে ঢুকে গৃহস্থের গলায় ভোজালি ধরে। অস্ত্র দেখিয়ে সকলকে কোণঠাসা করে ডাকাতি করে। এতে অমরেশ বাবু অসুস্থ হয়ে পড়লে, জলের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে এসে তাঁকে সুশ্রুষাতেও সহযোগিতা করে। তবে, বাড়ি থেকে সোনার গহনা ও নগদ টাকা মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার সামগ্রী ডাকাতি করে নিয়ে যায় তারা। আবার, যাওয়ার আগে, কাড়িয়ে নেওয়া মোবাইলগুলি বাড়ির বাইরে একটি স্থানে রেখে বেরিয়ে যায় ডাকাতের দল। অমরেশ বাবু’র স্ত্রী সুচিত্রা দেবী শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে বর্ণনা করছিলেন, “ডাকাতের দল প্রায় এক ঘন্টা ধরে আমাদের বাড়িতে এই ডাকাতির কাণ্ডটি করেছে। ওই সময় আতঙ্কিত হয়ে, আমার স্বামী যিনি হাই সুগারের রোগী, জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন ওই ডাকাতের দলই জলের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে দেন আমাদের দিকে। খানিকটা সহযোগিতা করেন সুস্থ করার ক্ষেত্রে। আমাদের শারীরিক ভাবে কোন হেনস্থা করেনি। কিন্তু, বাড়িতে কোন জিনিস রাখল না তারা!”

thebengalpost.net
লন্ডভন্ড ঘর :

শুক্রবার ভোররাতে এমনই এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে গেল মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল সংলগ্ন বিদ্যাসাগর পল্লী এলাকায়। শুক্রবার রাত তিনটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের একেবারে প্রান্তে নতুন গড়ে ওঠা এই বিদ্যাসাগর পল্লী এলাকায়। ওই এলাকায় সদ্য নতুন একটি বাড়ি তৈরি করে, মাত্র কয়েক মাস আগে থেকে বসবাস করছেন ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষা দপ্তরের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক অমরেশ কর। বাড়িতে দুই ছেলেমেয়ে স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন। শুক্রবার রাতে হঠাৎ তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে দেখেন, তাঁর গলাতে একটি ধারালো অস্ত্র ধরেছে ডাকাতের দল। ডাকাত দল দাবি করে, “বাড়িতে রাখা ৫০ লক্ষ টাকা তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। সোনার গহনা বা সামগ্রী রয়েছে তুলে দাও।” অমরেশ বাবু জানান, “আমার কাছে ওরকম কোন টাকা নেই। সদ্য বাড়ি তৈরি করে হাত খালি হয়ে গিয়েছে।”
এই কথোপকথন এর মাঝে পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা অমরেশ বাবুর স্ত্রী সুচিত্রা কর বেরিয়ে এসে দেখার চেষ্টা করেন কি হয়েছে। তখনই সকলকেই একটি জায়গায় জোর করে সোফাতে বসিয়ে দেয় ডাকাতের দল। অস্ত্র দেখিয়ে তাদের জোর করে বসিয়ে রেখে বাড়িতে থাকা সমস্ত আলমারি ও ড্রয়ার তছনছ করে তল্লাশি চালাতে থাকে। বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে লুকিয়ে রাখা প্রায় ১৬ ভরি সোনার গহনা, পাওয়া সোনার মেডেল, নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তারা।

thebengalpost.net
ডাকাতি মেদিনীপুরে :

শুক্রবার দুপুরে অমরেশ কর বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনি। অতর্কিত ভাবে ডাকাতদল প্রবেশ করে সমস্ত কিছু লুট করে নিয়ে গিয়েছে। তবে, ডাকাতির শুরুতে কাড়িয়ে নেওয়া মোবাইলগুলি যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে রেখে গিয়েছে তারা। ঘটনায় চরম আতঙ্কে রয়েছি আমরা।” ঘটনার খবর পেয়ে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ শুক্রবার সকাল থেকেই তদন্ত শুরু করে। ডাকাত দলের আসা-যাওয়ার সম্ভাব্য রাস্তাগুলি দেখার সাথে সাথে, পুরো বাড়ি ঘুরে দেখে এবং অমরেশ কর ও পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে ডাকাতদলের হদিস পাওয়ার চেষ্টা করছে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ। তবে, এই ধরনের আজব ডাকাতিতে হতভম্ব মেদিনীপুর বাসী! শহরবাসীর মনে প্রশ্ন জাগছে, তবে কি কেউ ইচ্ছে করেই পেশায় বিদ্যালয় পরিদর্শক অমরেশ বাবুকে বিপদে ফেলতে চেয়েছেন নাকি অন্য কাউকে বিপদে খেলতে গিয়ে, ভুল পথে পরিচালিত করেছেন ডাকাত দলকে? কে বা কারা সেই ডাকাতদলের ইনফর্মার? প্রশ্ন খোঁজার দায়িত্ব পুলিশের। ‌ শহরবাসী তাকিয়ে আছেন, পুলিশ আদৌ এই ডাকাতির কিনারা করতে পারেন কিনা সেই দিকেই!

thebengalpost.net
আতঙ্কিত পরিবার :