দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩০ মার্চ: তিনি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নয়নের মণি। বেকারত্ব আর হতাশা ভরা জীবনে আশার আলো। ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের (শিক্ষা সংক্রান্ত) সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। একসময় রাজ্য সরকারের অধীন স্ব-শাসিত সংস্থা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (School Service Commission) আইনজীবী হিসেবে সাফল্যের সাথে কাজ করেছেন। তাই, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সমস্ত আইনি আঁট ঘাট বেশ ভালোই জানেন। জানেন, ‘দুর্নীতি’ বিষয়ক জটিলতাগুলোও। তাই, শিক্ষা সংক্রান্ত, বিশেষত শিক্ষক নিয়োগের মামলায় তিনি একাই ধুয়ে দিচ্ছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুঁদে আইনজীবিদের! কারণ, আইনজীবী হিসেবে তিনি যতখানি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তার সবটুকু দিয়ে একজন সৎ, নির্ভিক বিচারপতি হিসেবে একের পর এক প্রশংসনীয় রায় দান করে যাচ্ছেন। দুর্নীতির ক্ষেত্রে তিনি যেমন সরকারপক্ষকে পড়া আক্রমণ করছেন, ঠিক তেমনই দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের চাকরি কেড়ে নিতেও পিছপা হচ্ছেন না! আর, প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের কাছে তিনি হয়ে উঠছেন কলকাতা হাইকোর্টের একমাত্র ভরসার জায়গা। তবে, তাতে লাভ আর হচ্ছে কোথায়! দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত, চাকরিপ্রার্থীদের বরখাস্ত, বেতন ফেরত দেওয়া- প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আর, এতেই এবার গর্জে উঠলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি’র দ্বারস্থ হয়ে তাঁর বার্তা, “আমার হাত বারবার বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য আমি কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি। চাকরিতে যে দুর্নীতি হয়েছে, এই বিষয়টিও দেখুন।”
প্রসঙ্গত, স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের কয়েকটি মামলায় সম্প্রতি সিবিআই তদন্তের (CBI Investigation) নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কারণ, বিচারপতি মনে করেছিলেন, সেখানে বড় কোনও ‘দুর্নীতি’ থাকতে পারে। আর, তাতে জড়িত থাকতে পারেন অনেক রাঘব বোয়ালরা! কিন্তু, ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিটি সিবিআই অনুসন্ধানের মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে চলেছে ধারাবাহিকভাবে। এরপর, শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এসএসসি-র তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব-নিকেশ চেয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। সেই নির্দেশেও ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়! এর প্রেক্ষিতেই কার্যত ক্ষুব্ধ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ দাবি করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের হাত বেঁধে দিচ্ছে? গত মাস দুয়েক ধরে নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর দেওয়া চারটি সিবিআই অনুসন্ধানের মামলার নথি এবং সেগুলিতে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া স্থগিতাদেশের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিচারপতির বক্তব্য, “দেশ দেখুক, বিচার করুক, বেআইনি চাকরি দেওয়া নিয়ে কী চলছে!”
একই সঙ্গে ভার্চুয়াল শুনানি চলাকালীন এক আইনজীবীর মন্তব্য, “কথা হয়ে গিয়েছে, স্টে (স্থগিতাদেশ) হয়ে যাবে”; এই বক্তব্যের রেকর্ডিং ওই ভার্চুয়াল শুনানির রেকর্ড থেকে বের করার কথা বলেন তিনি। বলেন, “বিচার করা হোক গোটা বিষয়টি।” একই সঙ্গে লিখিত প্রশাসনিক নির্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তাঁর কাছে মঙ্গলবার এক আইনজীবী এসে এই সব মামলা নিয়ে এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। তাঁর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, তাঁকে যেন মাফ করেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “তাঁকে এক কাপ কফি খাইয়ে বলেছি, আপনি আসুন। যদি প্রধান বিচারপতি সেই ব্যক্তির নাম জানতে চান, আমি বলব।” পাশাপাশি, এসএসসি’র উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিংহের সম্পত্তির হিসেব নিয়ে তার দেওয়া নির্দেশের পাল্টা সিলবন্ধ খাম খোলা যাবে না বলে যে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ, সেই বিতর্কেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমার হাত বারবার বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য আমি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি। চাকরিতে যে দুর্নীতি হয়েছে, এই বিষয়টিও দেখুন।”