দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৩ ফেব্রুয়ারি:এখনও থমকে আছে আপার প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ জমা দেওয়া (Grievances) এবং শুনানি পর্ব (Hearing) শেষ হয়েছে ২০২১ এর পুজোর আগেই। তবে, এখনও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ জমা দেওয়া চাকরিপ্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে রিজন অর্ডার (Reason Order) বা প্যানেলে না থাকার কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। প্রায় ১৪-১৫ হাজার চাকরি প্রার্থীর মধ্যে বেশির ভাগের কাছেই পৌঁছয়নি চিঠি। ফলে, আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রম করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের। কবে, সঠিক নিয়ম মেনে আপার প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে তা জানেন না কেউ! অথচ, একের পর এক নির্বাচন আসছে। রাজ্যে সমস্ত কিছুই হচ্ছে নিয়ম মেনে। শুধুমাত্র শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এই ধরনের গড়িমসিতে হতাশ শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা।
এদিকে, নবম থেকে দ্বাদশে’র শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতি ধরা পড়েছে গত কয়েক বছর ধরে। ২০১৯ এবং ২০২০’র মধ্যে নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও, ২০২০ থেকে ২০২২ এর মধ্যে এই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আদালত থেকে রাজপথ, এখনও উত্তাল হয়ে আছে। আদালতের রায় আগেও চাকরি গেছে একাধিক চাকরিপ্রার্থীর। ফের, গত সোমবার ৬ জন এবং মঙ্গলবার ১ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যথাক্রমে, আব্দুল গনি আনসারি এবং সেতাব উদ্দিন এর করা মামলায় ইতিহাস বিষয়ের ৭ জনের চাকরি বাতিল করে, বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, কম নাম্বার পেয়েও তাঁরা প্যানেলে জায়গা পেয়েছিলেন। বঞ্চিত হয়েছিলেন বেশি নম্বর পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। গত বছর (২০২১) নভেম্বরে ওই মামলার শুনানিতে মামলাকারীর দাবিতে সত্যতা রয়েছে বলে জানায় এসএসসি। তারা স্বীকার করে, অনিচ্ছাকৃত ভাবে ওই নিয়োগে ভুল হয়েছিল। যদিও আদালত তা মানতে রাজি হয়নি! কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, কোনও ভুল নয়। জেনেবুঝে ওই নিয়োগ করা হয়েছিল। আর সেজন্যই, তৎকালীন এসএসসি চেয়ারম্যান (SSC Chairman) সৌমিত্র সরকার এবং সচিব (Secretary) অশোক কুমার সাহা-কেও এই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, এসএসসি-র গ্রুপ-ডি নিয়ে মঙ্গলবার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। হাই কোর্টের দুই বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে হয় শুনানি। ডিভিশন বেঞ্চ গ্রুপ-ডি নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তবে, আগামীকাল, বৃহস্পতিবারের মধ্যে মুখবন্ধ খামে এই নিয়োগের বিস্তারিত জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। ফলে, গ্রুপ ডি নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে রীতিমতো চাপে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্রসঙ্গত, স্কুলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি স্তরের কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে প্রায় ৮০০ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দেয় একক বেঞ্চ। তবে রাজ্য একক বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতি মামলাটিতেও স্থগিতাদেশ দেয়। তবে, মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এর শুনানিতে, চাকরির সুপারিশ করা স্কুল সার্ভিস কমিশনকে রীতিমতো চাপে ফেলে, নিয়োগপত্র হাতে তুলে দেওয়া মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গ্রুপ ডি নিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ মুখ বন্ধ খামে আদালতে জমা করার জন্য।