দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি: দূরত্ব ঘুচিলনা তবুও! বিধায়ক ভোটে দাঁড়িয়েছেন কাউন্সিলর হওয়ার জন্য। আর, সেই লড়াইয়ের আশেপাশে কোথাও নেই সাংসদের অস্তিত্ব! শুধু তো সাংসদ নন, দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি থেকে বর্তমানে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। তাতে অবশ্য কিছু এসে যায়না খড়্গপুর সদরের বিধায়ক তথা ৩৩ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের। বরং, তিনি এর দায় আপাতত ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের’ ঘাড়ে চাপিয়েই রেহাই পেতে চাইছেন। প্রসঙ্গত, খড়্গপুর শহরের ৩৩ নং ওয়ার্ডের তালবাগিচা সহ বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বিজেপি প্রার্থী হিরণের যে বড় বড় হোর্ডিং, ব্যানার টাঙানো হয়েছে, তাতে কোথাও নেই মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছবি! আছেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী, নরেন্দ্র মোদী, সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী’র ছবি। আর, এ নিয়েই ফের নির্বাচনের মাত্র ৭ দিন আগে দিলীপ-হিরণের দ্বৈরথ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে! আর, তা নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি, ৩৩ নং ওয়ার্ডে হিরণের প্রতিপক্ষ তথা প্রবীণ তৃণমূল নেতা জহর পাল।
৩৩ নং ওয়ার্ড জুড়ে হিরণের যে ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে সেখানে নেই সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এতে অবশ্য বিতর্কের কিছু দেখছেন না হিরণ! তিনি বললেন, “দেখুন বিজেপি দলে একটা ডিসিপ্লিন আছে। এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্ত হোর্ডিং, ব্যানার পাঠানো হয়েছে। তা লাগাচ্ছেন এখানের মন্ডল সভাপতি ও তাঁর নেতৃত্বে কার্যকর্তারা। সেখানে আমার কিছু করার নেই। আর, এ নিয়ে এতো বিতর্কেরও কিছু নেই। ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তারা দিনরাত এক করে, জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন।” তবে, রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন ‘কেন্দ্রীয়ভাবে’ বলতে হিরণ যদি ‘দিল্লি’কেই বোঝাতে চান, তা কি আদৌও বিশ্বাসযোগ্য? প্রথমত, পৌরভোটের হোর্ডিং দিল্লি থেকে আসবে খড়্গপুরে, এও কি সম্ভব! আর, দ্বিতীয়ত যদিও বা দিল্লির নির্দেশে হোর্ডিং তৈরি হয়, তবে সেখান থেকে কখনোই বাদ যাবেন না দিলীপ। কারণ, তিনি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং মেদিনীপুরের সাংসদ ও খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। তবে কি, হিরণ আসলে দিলীপের প্রতি পুরানো প্রতিশোধ নিচ্ছেন বা দিলীপ-কে পাল্টা জবাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, “সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, দিলীপ অনুগামীদের পোস্টারে, ব্যানারে ঠাঁয় হয়নি হিরণের। তাই, হিরণ-ও দিলীপকে জায়গা দেননি তাঁর হোর্ডিংয়ে!” বিষয়টি নিয়ে রেলশহরের অলিতে গলিতে যখন নানা আলোচনা চলছে, তখনই হিরণের প্রতি চরম কটাক্ষ করলেন ৩৩ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জহর পাল।
এ নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী জহর পাল মন্তব্য করেছেন, “এ তো পুরানো ব্যাপার। গোটা খড়্গপুর জানে, যেখানে হিরণ থাকবে, সেখানে দিলীপ ঘোষ থাকবে না! আর যেখানে দিলীপ ঘোষ থাকবে, সেখানে হিরণ থাকবে না। এসব নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। তবে, যেটা বলার আছে তা হলো, হিরণ এখন পাগল হয়ে গেছে। তাই, বিধায়কের কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে; অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, লোক ডেকে ডেকে সেলফি তুলছে, এইসব আর কি! কিন্তু, ও তো ঠান্ডা ঘরের ছেলে। সিনেমা করে বেড়াবে! এলাকাবাসীর প্রয়োজনের সময়ে ওকে কি পাওয়া যাবে? যখন কোনো পাড়ায় জলের পাইপটা ফেটে যাবে, পাড়ায় সীমানা নিয়ে ঝামেলা হবে, তখন পাড়ার লোকেরা ওকে কোথায় পাবে!” তবে, হিরণ-ও পাল্টা আক্রমণ করে জানিয়েছেন, “বিজেপির হোর্ডিং, পোস্টার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে; উনি বরং জবাব দিন উনি নির্দল না তৃণমূল? ওনার ছেলেকে কেন পদ থেকে সরানো হল, কেন বউমা-কে বহিষ্কার করা হল?” এসবের জবাব না দিলেও, জহর পাল অবশ্য স্ব-মেজাজেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজের গড়ে।