দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সমীরণ ঘোষ, ১০ ফেব্রুয়ারি: “পৃথিবীতে কে কাহার!” রবি ঠাকুরের বিখ্যাত ‘পোস্টমাস্টার’ ছোটোগল্পের অন্তিম অনুচ্ছেদের ঠিক আগের সেই চিরস্মরণীয় লাইন। এযুগেও প্রতিটি মুহূর্তে সমান প্রাসঙ্গিক। তা সে সমাজ সংসার হোক কিংবা প্রেম ভালোবাসা! আর, রাজনীতি? তত্ত্ববিদেরা বলছেন, ‘পৃথিবীতেই কেউ কারুর নয়, আর রাজনীতিতে! আশা করেন কি করে মশাই?” সত্যিই তো, তাবড় সব মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদরা যেভাবে নিমেষের মধ্যেই ‘দল বদল’ বা ‘ভোল বদল’ করে চলেছেন, তাতে আর রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে কোথায়! আর, এতো সামান্য পৌর নির্বাচন। মেদিনীপুর শহরের এই সেদিনের ‘ডাকাবুকো’ তৃণমূল যুবকর্মীই আজ বিজেপি প্রার্থী! আবার, মেদিনীপুর শহরে প্রথম পা রেখে সেদিনের ‘সেলিব্রেটি’ তৃণমূল প্রার্থী (বর্তমান বিধায়ক) জুন মালিয়া যাঁর বাইকে চেপে, শহরবাসীকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন (বা, শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছিলেন), সেই যুবকর্মী আজ কংগ্রেস প্রার্থী! সবটাই অবশ্য ‘বিবর্তনশীল’ এই রাজনৈতিক জগতে অতি তুচ্ছ, এক্কেবারে স্বাভাবিক। আর, সত্যিই তো, উপরমহলের ‘নৈতিকতা বিসর্জন’ এর কাছে, এই পৌরভোটের দলবদল কিংবা ‘নির্দল’ হয়ে যাওয়া, এ একেবারেই নগন্য। বলছেন সচেতন রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে চা-পান দোকানের রাজনৈতিক বিজ্ঞরাও। মেদিনীপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে এবার কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন, একেবারে তরুণ, তরতাজা নেতা সুমন মুখার্জি। মাত্র সাত দিন আগেও যিনি যুব তৃনমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে তাঁর তৎকালীন সহকর্মীরাই বলছেন। আর, সুমন বলছেন, “আমি নীতিভ্রষ্ট হয়নি, নীতিভ্রষ্ট হওয়া দলটা ছেড়ে এসেছি। এসেছি জাতীয় কংগ্রেসে। একসময় এই আঁতুড়ঘর থেকেই তৃনমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়েছিল।” কিন্তু, দিদির অন্ধ সমর্থক ছিলেন তো? বেঙ্গল পোস্ট-কে সুমন বললেন, “আজও দিদিবাদী, তবে সুবিধাবাদী নই। নীচু স্তরের নেতাদের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আর সহ্য করতে পারলাম না!”

thebengalpost.net
মার্চ মাসের ৭ তারিখ (২০২১) মেদিনীপুর শহরে :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মার্চ মাসের সাত তারিখে (২০২১), তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মেদিনীপুর শহরে পা রেখেছিলেন জুন মালিয়া। প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন মাইতির বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছবিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেছিলেন নিজের প্রচারপর্ব। আর, মৃগেন বাবু’র বাড়ির সামনে সেদিন অগণিত উৎসাহী জনতার ভিড়। সঙ্গে সাংবাদিকদের ঘেরাটোপ। আর, সমস্ত ঘেরাটোপ-কে বোকা বানিয়ে, নিমেষের মধ্যে জুন মালিয়া এক যুবকের স্কুটারে উঠে পড়েছিলেন। সেই স্কুটারে চেপেই তাঁর প্রথমবারের জন্য মেদিনীপুর শহর পরিভ্রমণ! সেদিনের সেই তৃণমূল যুবকর্মী সুমন মুখার্জি-ই এবার মেদিনীপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব (রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি) প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, বামেদের শিক্ষক প্রার্থী মানস মিদ্যা আর বিজেপি’র প্রার্থী সমাজসেবী কুহেলি দত্ত। অন্যদিকে, শহরের আরেক‌ প্রাক্তন তৃণমূল যুবকর্মী সুশান্ত ঘোষ এবার ২৪ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। শহরবাসী ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম তালিকায় তাঁর নাম ছিল ২৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু, সংশোধিত তালিকায় বাদ যায় তাঁর নাম! সেই অপমান ‘ফুটবলার’ সুশান্তের কাছে মনে হয়েছিল, “কর্মীদের সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করা!” অগত্যা আজ তিনি বিজেপির ২৪ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী।

thebengalpost.net
কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা:

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন) :

এদিকে, আজ স্ক্রুটিনি পর্বের শেষে জানা গেছে মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫-টি ওয়ার্ডে মোট ১১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে, তৃণমূল ২৫, বিজেপি ২৫, বাম ২০ (সিপিআইএম ১৬, সিপিআই ৪), কংগ্রেস ১৭, ফরোয়ার্ড ব্লক ৪ (বাম জোটে নেই), SUCI ৩ এবং নির্দল ১৮। এই ‘নির্দল কাঁটা’ ই এবার ভাবাচ্ছে বড় দলগুলির প্রার্থীদের। বিশেষত, ৯ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অনয় মাইতি, ১৪ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অর্পিতা রায় নায়েক, ১৬ নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সুভাষভয় ঘোষ (লুসু দা)-দের নিয়ে নিঃসন্দেহে চিন্তিত তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা! তবে, মুখে অবশ্য কেউই স্বীকার করছেন না সে কথা। যদিও, এখনও বাকি মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব! শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব তাই আগেভাগেই শুনিয়ে রেখেছে, “এখনও অনেক খেলা বাকি!”

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন):

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন) :

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন) :