দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ জানুয়ারি: লক্ষ্য খড়্গপুর পৌরসভা। নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগেই ব্লু-প্রিন্ট (Blue Print) তৈরি করে ফেলল মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। ৩৫-টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হল, ৪ জন অভিজ্ঞ বিধায়ক এবং ১ জন প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্য সম্পাদককে। তাঁরা প্রত্যেকে ৭-টি করে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকবেন এবং তাঁদের অধীনে থাকবেন ওয়ার্ড পিছু ১ জন অর্থাৎ মোট ৭ জন করে পর্যবেক্ষক। এই পুরো টিমের মাথায় থাকবেন স্বয়ং জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং জেলা চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক ও পর্যবেক্ষকরা নিজেদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। একই কথা জানিয়েছেন, খড়্গপুর পৌরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন প্রদীপ সরকারও। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৫ টি বিধানসভার মাত্র ২-টি বিজেপির দখলে। ঘাটাল ও খড়্গপুর সদর। এর মধ্যে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত হল এই খড়্গপুর সদর বিধানসভা। বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে সেই খড়্গপুর পৌরসভার ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪-টিতেই এগিয়ে বিজেপি। তাই, জেলার অন্যান্য পৌরসভাগুলি নিয়ে চিন্তা না থাকলেও, মিশ্র সংস্কৃতির ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুর নিয়ে যে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কিছুটা হলেও দুঃশ্চিন্তায় আছে, তা বলাই বাহুল্য! আর, সেজন্যই খড়্গপুর-কে পাখির চোখ করে, ১ মাস আগে থেকেই ঝাঁপালো শাসকদল।
বৃহস্পতিবার বিকেল মেদিনীপুর শহরের নান্নুরচকে অবস্থিত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দীনেন রায়, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার চার জন বিধায়ক যথাক্রমে উত্তরা সিংহ হাজরা, বিক্রম চন্দ্র প্রধান, পরেশ মুর্মু, সূর্য অট্ট। এছাড়াও ছিলেন, রাজ্য সম্পাদক ও প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষ, খড়্গপুর পৌরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন প্রদীপ সরকার এবং খড়্গপুর শহরের দুই বর্ষীয়ান নেতা রবিশঙ্কর পান্ডে ও জহর পাল। এই বৈঠকেই স্থির হয়, খড়্গপুর পৌরসভার ৩৫-টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে, ৪ জন বিধায়ক যথাক্রমে- উত্তরা সিংহ হাজরা, বিক্রম চন্দ্র প্রধান, পরেশ মুর্মু, সূর্য অট্ট এবং প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষের মধ্যে। তাঁদের অধীনে থাকবেন ওয়ার্ড পিছু একজন অর্থাৎ মোট ৭ জন করে পর্যবেক্ষক। এই পুরো দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন জেলা চেয়ারম্যান ও খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক তথা এমকেডিএ চেয়ারম্যান দীনেন রায় এবং জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। শুধু তাই নয়, খড়্গপুর পৌরসভা পরিচালনার জন্য ১ নং ওয়ার্ডে তৈরি হবে নতুন একটি দলীয় কার্যালয়। সেখান থেকেই দলের সেনাপতিরা ‘খেলা’ (পড়ুন, ভোটের প্রচার) পরিচালনা করবেন! পুরো বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে, পৌর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন প্রদীপ সরকার জানিয়েছেন, “মিনি ইন্ডিয়া খড়্গপুর অবশ্যই দলের পাখির চোখ। রেলকে কাজে লাগিয়ে, রেলের কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে ও নানা চাপে রেখে বিধানসভায় বিজেপি এখানে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তবে, আমরা সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলাম। এবার আর তা হবেনা! রেলের অনৈতিক কাজকর্ম দেখলেই প্রতিবাদ হবে, আন্দোলন হবে। তাছাড়া, সাধারণ খড়্গপুর বাসীর এমনিতেই মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই, তৃণমূল এবার সবকটি ওয়ার্ডেই জিতবে।” বিধায়কদের দায়িত্ব দেওয়া ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে প্রদীপ বলেন, “মিনি ইন্ডিয়া খড়্গপুরে রেল ও মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব আছে। তাই, তাঁদের সাথে সমন্বয়ের জন্য অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও পর্যবেক্ষক প্রয়োজন। আমরা এই পদ্ধতিতে ২০১৯ এর বিধানসভা উপ নির্বাচনে সাফল্যও পেয়েছিলাম। এবারও, আমাদের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা নিজে উদ্যোগী হয়ে খড়্গপুরে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং দলের ৫ জন অভিজ্ঞ বিধায়ক ও একজন প্রাক্তন বিধায়কের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছেন।”
অন্যদিকে, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ছন্নছাড়া অবস্থায় বিজেপি! বিশেষত, খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরণ) এর সঙ্গে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের ‘মতবিরোধ’ও প্রকাশ্যে এসেছে ও আহছে বারবার। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার হিরণ মন্তব্য করেছেন, দল তাঁকে খড়্গপুরের ভোটার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এবার, তাঁর উপর যদি খড়্গপুর পৌরসভার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, তিনি বিজেপির হাতে এই পৌরসভা তুলে দেবেন! ইতিমধ্যে, রেলশহর অবশ্য তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দলের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের গোষ্ঠীর ‘অশান্তি’ লক্ষ্য করেছে। ফলে, হিরণ-কে পুরভোটে বিজেপি আদৌও কতটুকু কাজে লাগাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে! যদিও, খড়্গপুর ছাড়ার আগে দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁরাও বিধায়কদের কাজে লাগাবেন। তবে, সরাসরি হিরণের নাম না নিলেও, হিরণের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দিয়ে জানিয়েছেন, “অনেকেই বিজেপিতে ফিরে আসছেন।” অবশ্য, হিরণ-কে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “হিরণ কোনো বিষয়ই নয়! খড়্গপুর শহরকে চেনেনই না। সাধারণ মানুষও বিপদের সময়ে তাঁকে পায়নি। নিজের আখের গোছাতে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, এখন আবার তাঁর মুখেই মুখ্যমন্ত্রীর জয়গান! সবটাই নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। আর, তাঁর নিজের দলই তো তাঁকে গুরুত্ব দেয়না! বিধানসভা নির্বাচনে অন্যভাবে ভোট হয়েছে। মানুষ একবার ভুল করেছে। সেই সময় খড়্গপুর শহরে আমাদের সাংগঠনিক কিছু সমস্যাও ছিল। এবার আর তা নেই। মানুষ পৌরসভার তথা শহরের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভোট দেবেন। আর সাংগঠনিক ভাবেও আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। অভিজ্ঞ বিধায়ক ও প্রাক্তন বিধায়ক-দের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, আমরা সবদিক দিয়েই অনেক এগিয়ে গেছি।”