thebengalpost.net
নিখোঁজ ছাত্র সত্যব্রত পড়িয়া :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জানুয়ারি: ঠিক এক মাসের ব্যবধানে একই এলাকা থেকে দ্বিতীয় ছাত্র নিখোঁজ হয়ে গেল! প্রথমজন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। দ্বিতীয় ‘নিখোঁজ’ হওয়া ছাত্র একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত। দু’টি ঘটনাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর থানার অন্তর্গত। গত ১৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) মোহনপুর থানার অন্তর্গত বৈতা মহেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সুপ্রিয় ঘোষ নিখোঁজ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে। ওইদিন (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সে এখনো নিখোঁজ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি কেশিয়াড়ি থানার উত্তর ডুম্বুরকলার অন্তর্গত ডাডরা এলাকায়। অপরদিকে, ঠিক এক মাসের মাথায় সেই মোহনপুর থানার মোহনপুর হাইস্কুল থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র। বিদ্যালয়ের দুঃস্থ ও মেধাবী ওই ছাত্রের নাম সত্যব্রত পড়িয়া। বয়স ১৭। ঘটনাচক্রে এই ছাত্রটিও নিখোঁজ হয়েছে সেই বৃহস্পতিবার-ই (১৩ জানুয়ারি)! বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম নন্দ শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, “মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র নিখোঁজ হয়ে গেল। ওর বাবা-মা অত্যন্ত অভাবী। আমাদের বিদ্যালয়ের এই দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় আমরা সবাই। কোন শুভানুধ্যায়ী খোঁজ পেলে নিশ্চয়ই মোহনপুর থানায় জানাবেন।” মোহনপুর হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণীর এই মেধাবী ছাত্রের বাড়ি মোহনপুরের রাজনগর (পলাশীয়া) এলাকায়। বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই ছাত্রটিকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে, মোহনপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ওই ছাত্রের পরিবারের লোকজন। একই সঙ্গে ছাত্রটিকে খুঁজে পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রটির ছবি সহযোগে পোস্ট করা হয়েছে। দুটি ঘটনাটিরই তদন্ত চলছে মোহনপুর থানায়। তবে, ছাত্র দুটির এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি বলে জানা গেছে!

thebengalpost.net
নিখোঁজ ছাত্র সত্যব্রত পড়িয়া :

ঘটনাচক্রে দু’টি ঘটনাই একই এলাকার হলেও, গোটা জেলা ও রাজ্যের শিক্ষক মহল এ নিয়ে উদ্বিগ্ন! ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে, রাজ্যজুড়ে মারাত্মক হারে স্কুল ছুট বেড়ে যাওয়ার ঘটনা। তার সাথে দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে! এ এক চরম সংকট পূর্ণ অবস্থা বলে বর্ণনা করেছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে মনোবিদরা। একদিকে লকডাউন বা আংশিক লকডাউন বা অতিমারীর প্রভাবে দুঃস্থ, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোতে মারাত্মক অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। ঠিক অন্যদিকে, স্কুল বন্ধ থাকায় বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ায়, ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছে। তারা সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে হয়তো কোন কাজের সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছে দূরে কোথাও! ছাত্রদের এই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষক সংগঠনের অন্যতম নেতৃত্ব তথা ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী। তিনি বললেন, “স্কুল বন্ধ থাকা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে ছেলে-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। বিশেষত সাধারন পরিবারগুলোতে, যেখানে সংস্কৃতি চর্চা বা বিভিন্ন বিষয়ের সাথে যুক্ত থাকার অবকাশ নেই বা বাবা-মা ছেলেমেয়েদের অধিক সময় দিতে পারেন না কাজের জন্য, সেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা মানসিক অবসাদে ভুগছে। ফলে তারা ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে, পড়াশোনার বিশেষ চাপ না থাকায় আর হাতে মোবাইল নামক একটি আধুনিক যন্ত্র এসে যাওয়ায়, বিভিন্ন গেম বা নানা ধরনের ওয়েবসাইটে আসক্ত হয়েও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে।” তাঁর মতে, “ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য ফেরানোর জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সেই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনাও করছি।” বাড়িতে অভাব-অনটন, নানা অশান্তি আর বন্ধু বান্ধবদের সাথে প্রতিদিন দেখা না হওয়া, এই কারণগুলিকে দায়ী করছেন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া দুই ছাত্রের স্কুলের দুই প্রধান শিক্ষক যথাক্রমে অনুপম নন্দ এবং কনক কান্তি কর-ও। এই বিষয়ে মনোবিদ তথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ কাবেরী ভট্টাচার্য বলেন, “স্কুল বন্ধ থাকা ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে নিশ্চিতভাবে। ছাত্রদের তাই বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটির সাথে যুক্ত রাখতে হবে।” কিন্তু, যে পরিবারগুলিতে তা সম্ভব নয়, এতদিন তাঁদের ‘ভরসা’ ছিল বিদ্যালয়ের মুক্ত প্রাঙ্গণ-ই। এই মুহূর্তে তাই প্রগাঢ় এক অন্ধকারে ডুবে একটা বৃহৎ সমাজ!(Edited by Maniraj Ghosh)

thebengalpost.net
নিখোঁজ সত্যব্রত পড়িয়া :

thebengalpost.net
বৈতা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র সুপ্রিয় ঘোষ :