মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ১৪ জানুয়ারি: ১৯৫৫ সালের এমবিবিএস (MBBS)। ১৯৫৬ সালেও দিল্লির সুবিখ্যাত টিউবারকিউলোসিস হাসপাতালের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধুমাত্র মেদিনীপুরবাসীকে সেবা করার আন্তরিক বাসনা থেকেই ১৯৫৭ সালে ফিরলেন নিজের প্রিয় মেদিনীপুর শহরে। সেই থেকেই জেলা শহর মেদিনীপুরে নিজের চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করলেন। প্রথমে রাজাবাজার-কোতবাজার এলাকায় এবং পরবর্তীতে জীবনের শেষদিন অবধি নিজের বাসভবন গোলকুঁয়াচক (ভারত সেবাশ্রম সংঘের বিপরীতে) এর কল্যাণ ক্লিনিকে। স্বল্পদিনেই হয়ে উঠলেন ‘মেদিনীপুরের সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি’, কারুর কারুর কাছে ‘মেদিনীপুরের বিধান রায়’! আর, সকলের কাছেই “গরীবের ভগবান”। তিনি, অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্যতম প্রবীণ এবং সুপ্রসিদ্ধ এমবিবিএস পাস অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক (Allopathic Doctor) ডাঃ খগেন্দ্রনাথ খামরুই (Dr. Khagendranath Khamrui); ৯২ বছর বয়সে (পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জন্মতারিখ- ১৯৩০ এর ১ মার্চ) নিঃশব্দে বিদায় নিলেন ইহজগত থেকে।‌ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত্রি ১১ টা ৫০ মিনিটে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে! নিঃসন্তান ডাঃ খামরুই রেখে গেলেন স্ত্রী আরতী খামরুই (৮৪), ভাই অক্ষয় খামরুই, ভাইপো-ভাইঝি, নাতি-নাতনি সহ তাঁর পরিবার-পরিজনদের! আর, রেখে গেলেন শোকাতুর অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের।

thebengalpost.net
ডাঃ খগেন্দ্রনাথ খামরুই :

একথা উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না, ডাঃ খামরুই চিকিৎসক হিসেবে কতখানি পারদর্শী বা বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর রোগ নির্ণয় করার (Diagnosis) করার ঐশ্বরিক ক্ষমতা, সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করার সহজাত প্রতিভা তথা নির্ভুল চিকিৎসা সম্পর্কে অবিভক্ত মেদিনীপুর অবগত। তাঁর মানবসেবার নিদর্শনও পেয়েছেন শুধু অবিভক্ত মেদিনীপুর বাসী নয়, আশেপাশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারাও। ১ টাকা-২ টাকা’ (কিংবা, তার থেকেও কম)র বিনিময়ে পরিষেবা দেওয়া শুরু, ২০১০ সাল অবধিও মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে ওষুধ সহ পরিষেবা দিয়ে গেছেন, একথাও সর্বজন বিদিত। পরবর্তী সময়েও তা ওষুধপত্র সহ কখনও ৫০ টাকা পেরিয়েছে বলে, মেদিনীপুর বাসী মনে করতে পারছেন না! অবশ্য, নেহাত নানা পরিষেবার জন্য এটুকু অর্থ হয়তো নিতে হত বলেই, তিনি তা গ্রহণ করতেন! দরিদ্র মানুষের কাছে সেটাও তিনি নিতেন না! সর্বোপরি, প্রায় ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত (২০১৮-‘১৯) তাঁর বিখ্যাত ‘কল্যাণ ক্লিনিক’ চেম্বারে বসে সাধারণ মানুষের সেবা করে গেছেন প্রচার বিমুখ এই চিকিৎসক। তাঁর অন্যতম এক ভাইপো সুভাষ খামরুই জেঠুর আদর্শ মেনে চিকিৎসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেদিনীপুর শহরেই। তিনি জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র মানুষকে সেবা করার আন্তরিক তাগিদ থেকে, প্রায় ৬৫ বছর চিকিৎসক হিসেবে টানা পরিষেবা দিয়ে গেছেন আমাদের জেঠু তথা চিকিৎসক খগেন্দ্রনাথ খামরুই।” স্বভাবতই তাঁর প্রয়াণে শোকে মুহ্যমান মেদিনীপুরবাসী! তাঁর অন্যতম নাত জামাই (ডাঃ সুভাষ খামরুইয়ের জামাই) সৌরভ দত্ত জানিয়েছেন, “উনি তো প্রণম্য মানুষ ছিলেন, একথা বলার প্রয়োজন নেই, মেদিনীপুর বাসী জানেন। গত কয়েকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গতকাল (১৩ জানুয়ারি) রাতে একটু বাড়াবাড়ি হতে, আমরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই রাত্রি ১১ টা ৫০ মিনিটে উনি পরলোকগমন করেন।” শুক্রবার সকাল ১১ টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের পদ্মাবতী শ্মশান ঘাটে মেদিনীপুরের মহান এই চিকিৎসকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মুখাগ্নি করেন ভাইপো দেবাশীষ খামরুই।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ির পথে :