মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ৬ জানুয়ারি: আংশিক লকডাউন আর ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই, বিরল ‘তিন সন্তান’ এর জন্ম দিলেন মেদিনীপুরের এক প্রসূতি। আর সেই তিন শিশুকেই সুস্থভাবে বাড়ি পাঠাতে পেরে খুশি মেদিনীপুরের দুই চিকিৎসক। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, মেদিনীপুর শহরের আবাস তলকুইয়ের বাসিন্দা রুফিনা হেমব্রম অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কিছুদিন পরই জানতে পারেন, তাঁর গর্ভে রয়েছে তিন তিনটি সন্তান! স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কিংকর সিংয়ের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে চিকিৎসা। তবে, সুস্থভাবে তিন শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখানো দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন তিনিও! অবশেষে, গত ২৪ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরের এক নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ওই প্রসূতি-কে ভর্তি করা হয়। তার পরদিনই অর্থাৎ পবিত্র বড়দিনে (২৫ ডিসেম্বর), মাত্র ৩২ সপ্তাহের (স্বাভাবিক সময় ৩৬-৩৮ সপ্তাহ) মাথায় বিরল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে এই তিন শিশুকে সুস্থ ভাবেই মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসেন স্বনামধন্য এই প্রসূতি বিশেষজ্ঞ। তিন শিশুর মধ্যে একটি ছেলে এবং দু’টি মেয়ে। তবে, স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের ওজন অত্যন্ত কম হয়, যথাক্রমে- ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম, ১ কেজি ৩৬০ গ্রাম এবং ১ কেজি ৬০ গ্রাম। একদিকে যখন পরিবার-পরিজন আর হাসপাতাল জুড়ে খুশির হাওয়া, ঠিক অন্যদিকে দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়, এইটিন শিশুকে বাঁচানো নিয়ে! পরিবারের ইচ্ছে অনুযায়ী, দায়িত্ব নেন শিশু চিকিৎসক ডাঃ দীপক কুমার মাসান্ত। সদ্যজাতদের ভর্তি করা হয়, ওই বেসরকারি হাসপাতালের স্পেশাল নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে (Special Newborn Care Unit- SNCU)। প্রায় ১০ দিন ওখানেই তাদের চিকিৎসা করেন ডাঃ মাসান্ত। যোগ্য সহায়তা করেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। অবশেষে, সম্পূর্ণ সুস্থ রূপে গতকাল (৫ জানুয়ারি) তাদের বাড়ি পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য যে, সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি ৭০০০ (সাত হাজার) প্রসূতির মধ্যে একসঙ্গে তিনটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনা রয়েছে এই পৃথিবীতে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় একসঙ্গে ভূমিষ্ঠ হওয়া তিন শিশুর মধ্যে কেউ না কেউ বা একাধিক জন মারা যায়। ভূমিষ্ঠ শিশুর তিন জনের মধ্যে তিনজনই সচরাচর বাঁচে না! কিন্তু, মেদিনীপুরের দুই বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ কিংকর সিং এবং ডাঃ দীপক কুমার মাসন্তর তত্ত্বাবধানে এবং চিকিৎসায় সেই অসাধ্য সাধনই হয়। মেদিনীপুর শহরের বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জনপ্রিয় চিকিৎসক ডাঃ দীপক কুমার মাসান্ত বলেন, “একসাথে তিনটি বাচ্চা সুস্থ ভাবে জন্ম নেওয়ার ঘটনা খুবই বিরল! আমাদের দেশে প্রতি ৭ হাজার প্রসূতির মধ্যে একসঙ্গে তিনটি শিশুর জন্ম দিয়েছেন ১ জন৷ যদিও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একসঙ্গে জন্ম হওয়া তিন শিশুর মধ্যে দু’টি বা একটি শিশু মারা যায়! তবে, চিকিৎসক কিংকর সিংয়ের সফল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়েই শিশু তিনটি সুস্থভাবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। মাত্র ৩২ সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রসূতিকে ডেলিভারি করিয়ে তিন শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা! ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের মধ্যে একটি শিশুর ওজন ছিল মাত্র ১ কেজি ৬০ গ্রাম, সেটাও অন্যতম বিরল ঘটনা। আপাততো মা ও তিন শিশুই সুস্থ। ধন্যবাদ স্পন্দন হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীদেরও। আমরা সকলেই এখন কামনা করছি, এই শিশুরা যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে”। আর, রুফিনা’র মুখ জুড়ে যেন মেরি মাতার পবিত্র হাসি! সেই হাসিই যেন বলে দিচ্ছে, ওরা সুস্থ ভাবেই বাকি জীবনটা কাটাতে পারবে।