দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, তনুপ ঘোষ, ২৯ ডিসেম্বর: ওরা কথা বলে না। তবে, স্নেহ, মমতা বোঝে। ওরা বেইমান নয়। ওরা প্রভুভক্ত। ঝুনি আর ভুলি। সঙ্গে ১১টি বাচ্চা নিয়ে দুটি পথ কুকুরের আস্তানা এখন পুলিশ ফাঁড়ি। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির। পুজোর মরসুমে দুটি মা পথ কুকুর মোট ১১ টি বাচ্চার জন্ম দেয়। এমনিতে পুলিশ ফাঁড়ি মানেই ২৪ ঘন্টা লোকজনের যাতায়াত। তবে, কুকুরছানা গুলির নিরাপত্তা দিতে ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ থেকে আবাসিকরা প্রত্যেকেই তৎপর। গড়ে উঠেছে পরস্পরের মধ্যে এক আত্মীয়তার সম্পর্ক!
বাচ্চাগুলোর যাতে কোন অসুবিধা না হয়, কেউ না বিরক্ত করতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অস্থায়ী ঘরের। ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য কুকুরগুলি জন্য আনা হয়েছে খড়। প্রতিদিন নিয়ম করে কুকুরগুলিকে থালায় বেড়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। পুলিশ কর্মীরাও অবসর সময়ে কুকুরগুলোকে আদর-যত্ন করেন। ক্ষীরপাই ফাঁড়ি বা পুলিশ পোস্টের ইনচার্জ প্রশান্ত কীর্তনীয়া বলেন, “ওরা আমাদের আদর পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। আমরাও সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে ওদের আদর করে খুশি হই”। ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির আইসি প্রশান্ত কীর্তনীয়া এও মনে করিয়ে দেন, “নিঝুম রাতে সবাই যখন ঘুমোয়, পুলিশের সঙ্গী হয় কুকুরেরা। পুলিশের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্ব চিরকালীন। আমি ফাঁড়িতে এক বছর দায়িত্ব নিয়েছি। আসার পর দেখি আমাদের ফাঁড়িতে দুটি মেয়ে পথ কুকুর আছে। ওদের দু’জনের ১১টি বাচ্চা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ওরা সকলেই এখন আমাদের সঙ্গেই থাকে। আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে উঠেছে। ওদের বাচ্চাগুলোকে ফাঁড়ির সকলেই সন্তানস্নেহে ভালোবাসে। সকলেই ওদের দেখাশোনা করে।”
ক্ষীরপাই ফাঁড়ির এক পুলিশ কর্মী জানালেন, “বাইরের কেউ যাতে এই কুকুরছানা গুলোকে বিরক্ত না করে, তার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। ফাঁড়ির মুল গেটে এবং ফাঁড়ির ভিতরে এই ধরনের আবেদন ঝোলানো হয়েছে”। সকলেই বলছেন এই সারমেয় শাবকগুলি তাঁদের খুব প্রিয়। জানা যায়, বাচ্চা কুকুরগুলির জন্য হরলিক্স থেকে বিস্কুট সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদিকে যখন চারপাশে শোনা যায়, কোথাও বিষ খাইয়ে কুকুরকে মেরে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও বা কুকুরের গায়ে গরম জল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই ক্ষীরপাই পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীদের কুকুরের প্রতি ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা অবাক করে, শিক্ষা দেয় মানবিকতার।