দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ ডিসেম্বর: কয়েকবছর আগে ভেঙে গিয়েছিল যুবকের বাম হাত। সেই হাতে অপারেশন সফলও হয়েছিল। কিন্তু, ওই হাতে যে ধাতব পাত বা প্লেট ঢুকিয়ে অপারেশন করা হয়েছিল, তা বের করতে গিয়েই ঘটলো মারাত্মক বিপত্তি! স্বাস্থ্যকর্মীদের মারাত্মক কোনো ভুলের খেসারত হিসেবে ওই যুবকের ডান হাত পুরোপুরি বাদ দিতে হল! মর্মান্তিক এই ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের। জেলার খড়্গপুর শহরের নিমপুরা’র বাসিন্দা, পেশায় রেলকর্মী বছর ৩৬ এর সুভাষ দাস গত ৬ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ১১ টায় নিজের অস্ত্রোপচার (অপারেশন) হওয়া বাম হাতের প্লেট খোলার জন্য, মেদিনীপুর শহরের খয়রুল্লাচকে অবস্থিত বেসরকারি সংস্থার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ৫-৬ বছর আগে তাঁর ওই হাতে সফল অস্ত্রোপচার যিনি করেছিলেন, সেই অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফের অধীনেই ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। রাত্রি দু’টো নাগাদ প্লেট খোলার ওই অপারেশন (অস্ত্রোপচার) হয় এবং যথারীতি ভোর ৫ টা নাগাদ বেডেও দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, তার পরপরই ডান হাতে যন্ত্রণা শুরু হয়। সেলাইন প্রভৃতি দেওয়ার জন্য ওই হাতে চ্যানেল করেছিলেন নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রথমে ওই কারণেই যন্ত্রণা ভাবা হয়েছিল, কিন্তু, মঙ্গলবার চিকিৎসক আব্দুল লতিফ সহ অন্যান্যরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়েছে! ডান হাতের ধমনী বা আর্টারি ব্লক হয়ে গেছে। অতি সত্ত্বর জটিল অপারেশন প্রয়োজন, যা এসএসকেএম ছাড়া সম্ভব নয়। তাঁদের ওখানেই রেফার করা হয়। কিন্তু, ওই অপারেশন আর্টারি ব্লকের ৮-১০ ঘন্টার মধ্যেই করতে হয়, না হলে তা পুরোপুরি ব্লক হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে, বুধবার বিকেল নাগাদ ওই পরিবার যখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছন, ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে! ওই বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, হাত বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
প্রসঙ্গত, বাম হাতের অস্ত্রপচার ঠিকঠাক হলেও, ডান হাতে চ্যানেল করতে গিয়ে বা ইনজেকশন দিতে গিয়ে এমন কোনো মারাত্মক ভুল করেছেন মেদিনীপুর শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা, যার চরম পরিণতি হল এই ঘটনা! এই বিষয়ে চিকিৎসক ডাঃ লতিফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমি বাম হাতের যে অপারেশন করেছি, তা সফল হয়েছে। ওই দিন প্লেট খোলাও ঠিকঠাক হয়েছে। তবে, ডান হাতে চ্যানেল করা হয়েছিল, সেখানে নিশ্চয়ই এমন কোন ভুল হয়েছে যাতে আর্টারি ব্লক হয়ে যায়। ভেন বা শিরা ব্লক হলে, সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যায়, কিন্তু আর্টারি বা ধমনী ব্লক হলে জটিল অস্ত্রোপচার করতে হয়। আমরা এসএসকেএম হাসপাতালে সেজন্য রেফার করেছিলাম। কিন্তু, সেখান থেকে ওনারা এক বেসরকারি হাসপাতালে যখন যান ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল! তবে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি নিজেও ব্যথিত।” এদিকে, পরিবারের মারাত্মক অভিযোগ, “যা সর্বনাশ করার ডাঃ লতিফ-ই করে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ডাঃ লতিফ-কে বারবার ফোন করা হলেও, উনি পৌঁছন মঙ্গলবার রাত ১০ টারও পরে! তার পর উনি, কিছু না লিখেই এসএসকেএমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ভর্তিই নেওয়া হয়নি।” সেখান থেকে বাধ্য হয়ে রেলের হাসপাতাল এবং সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছতে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) প্রায় বিকেল! ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেনা, মেদিনীপুর শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডাঃ লতিফ। তাঁদের এত বড় ভুলের জন্যই সুস্থ সবল যুবকের এই মর্মান্তিক পরিণতি! ইতিমধ্যে, ওই পরিবারের তরফে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। গুড়গুড়িপাল থানাতেও (ওই থানার অধীনেই অবস্থিত খয়রুল্লাচকের বেসরকারি হাসপাতাল) লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পরিবারের তরফে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেছেন, “ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুলিশের কাছে তুলে ধরব।” তবে, ওই পরিবার আর্টারির জটিল অপারেশন করাতে অনেক দেরি করে ফেলেছে বলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেছেন! যদিও, তাঁদের ভুলের বিষয়ে বিশেষ কিছু মন্তব্য করতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। আগামীকাল থেকেই তদন্ত শুরু হবে ওই চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।”