দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ ডিসেম্বর: অবশেষে পদক্ষেপ গ্রহণ করল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ছিল, আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক অধ্যাপিকাকে জাতি বিদ্বেষমূলক কটুক্তি করার! অভিযোগ জানিয়েছিলেন গত অক্টোবর মাসে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ১৯ অক্টোবর (২০২১) ওই অধ্যাপিকা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের। অভিযুক্ত অধ্যাপক হলেন, বাংলা বিভাগের ড. নির্মল বেরা। অভিযোগকারিণী অধ্যাপিকা, ওই একই বিভাগের ড. পাপিয়া মান্ডি। ওই ঘটনায় অবশেষে নড়েচড়ে বসল কলেজ কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার অভিযুক্তরা পক্ষে সাসপেনশন অর্ডার ধরানো হয়েছে। জানানো হয়েছে, অধ্যাপিকার করা অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন তাঁর এই সাসপেনশন অর্ডার বহাল থাকবে। তারপর, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সবং কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি’র অভিযোগ, পরীক্ষা চলাকালীন অধ্যাপক তাঁর ‘জাতি’ তুলে অপমানজনক মন্তব্য করেন। এরপর, কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই, একযোগে ওই অধ্যাপক এবং কলেজের অধ্যক্ষ ড. তপন কুমার দত্তের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পাপিয়া। তাতেও, নড়েচড়ে বসেনি কোন পক্ষই! অবশেষে, আদিবাসীদের সংগঠন সম্প্রতি কলেজ ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় লাগাতার ঘেরাওয়ের ডাক দিলে, নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। সেই চাপে নড়েচড়ে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষও। শেষ পর্যন্ত বরখাস্ত করা হল ওই অধ্যাপককে। তদন্তে সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে অভিমত অধ্যক্ষ তপন কুমার দত্তের। ততদিন অবধি সবং কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ড. পাপিয়া মান্ডি। আগে, তিনি স্নাতক বিভাগের প্রধান ছিলেন, ড. বেরা ছিলেন স্নাতকোত্তর বিভাগের প্রধান।
আর, এই ঘটনায় অনেকেই তিন দশক (তিরিশ বছর) আগের চুনী কোটাল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছেন। ১৯৯০-‘৯১ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা চুনী কোটাল বিভাগীয় এক অধ্যাপকের লাগাতার জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষ মূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ! শেষ পর্যন্ত, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন লোধা শবর সম্প্রদায়ের এই প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। সেই সময় চুনী পাশে পাননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ প্রশাসন কোনো পক্ষকেই! আর একটু মানসিক সাহস দেখানোর সুযোগ টুকুও হয়তো পাননি। তবে, এ যুগের পাপিয়া অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি! আর, পাশে পেয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনকে। সবমিলিয়ে চুনী ইতিহাসের ছায়া থাকলেও, সুবিচার পেতে চলেছেন অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডি! এমনটাই মত এই সময়ের সমাজকর্মীদের। যদিও, সঠিক বিচার না হওয়া অবধি খুশি নয়, আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন!