দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৪ নভেম্বর:পণ্ডিতেরা বলতেন, বাঙালির নাকি বারো মাসে তেরো পার্বণ! হুজুগে বাঙালি অবশ্য তা ভুল প্রমাণিত করে, ‘বারো মাসে’ আঠারো কিংবা তার থেকেও বেশি পার্বণে পৌঁছে দিয়েছে। উৎসবপ্রিয় বাঙালি এখন তাই সব উৎসবেই মেতে ওঠে। ব্যতিক্রম নন মেদিনীপুরবাসীও! গত ৩-৪ বছর আগেও জেলাশহর মেদিনীপুরে জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে এতো উচ্ছ্বাস-আনন্দ লক্ষ্য করা যায়নি। অতিমারী পর্ব কাটিয়ে, এই বছরের জগদ্ধাত্রী পূজোতে যেভাবে আনন্দে মেতে উঠলেন দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, তা সত্যিই অনবদ্য! রবিবার যেমন ছিল জগদ্ধাত্রী পুজোর শেষদিন বা দশমী তিথি। ছিল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াও। সন্ধ্যা থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে ঝিমঝিম করে। সেসব উপেক্ষা করেই শহর মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি পূজা মণ্ডপে নেমেছিল দর্শনার্থীদের ঢল। শহরের পঞ্চুরচক কিংবা জগন্নাথ মন্দিরের খান বাড়ির পুজো, ভিড় ছিল নজরকাড়া! অন্যদিকে, এবারের পুজোতে সাধারণ মানুষের সঙ্গেই আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে শাসকদল ও বিরোধীদলের নেতা-নেত্রী, বিধায়ক-সাংসদদেরও। পুজো উদ্বোধনে অবশ্য সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া। শুক্রবার পর্যন্ত একাধিক পুজো তিনি উদ্বোধন করেছেন। পিছিয়ে ছিলেন না শাসকদলের মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাও। জেলার বিভিন্ন জায়গায় তিনি পুজো উদ্বোধন করেছেন। আর, তাঁদের সঙ্গী হয়েছেন শাসকদলের একাধিক জেলা ও শহর নেতৃত্ব। অপরদিকে, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর প্রায় ৬ মাস বাদে, শুক্রবার জেলাশহর মেদিনীপুরে এসে বিজেপি প্রভাবিত তিন-তিনটি বড় পুজো উদ্বোধন করে গেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার ঠিক পরের দিনই, গতকাল অর্থাৎ শনিবার জগদ্ধাত্রী পূজার নবমী উপলক্ষে মেদিনীপুরের ওই পুজো মণ্ডপগুলি প্রদর্শন করে গেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সবমিলিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোয় এবার জমজমাট ছিল মেদিনীপুর এবং রবিবার শেষদিন, বৃষ্টির মধ্যেও তা অটুট ছিল।
এদিকে, দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ফের দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। ৭ টি জেলায় আগামীকাল, সোমবার পর্যন্ত জারি করা হয়েছে ‘হলুদ সতর্কতা’। দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম, নদিয়া, দুই বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, কলকাতার আকাশ মেঘলা থাকবে। সেই সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিও হতে পারে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মধ্য আন্দামান সাগরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ (Heavy rain Forecast)। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে উত্তর আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করবে। এরপর গভীর নিম্নচাপ আরো ঘণীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার নাগাদ অন্ধপ্রদেশ উপকূল এলাকায় পৌঁছাবে। অন্যদিকে, তামিলনাড়ু উপকূলে রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। ঘূর্ণাবর্তের থেকে অক্ষরেখা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার উপর তৈরি এই অক্ষরেখার প্রভাবেই বৃষ্টি বাংলায়। সোমবার পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাত চলবে দফায় দফায়। মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে এবং ওই দিন থেকেই ফের জাঁকিয়ে শীত পড়বে বলে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস।