দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ৫ নভেম্বর: “মায়ের নুপুর পায়ের শব্দ (নিক্কন) যেখানে থামবে, সেখানেই হবে মন্দির”! এই হল, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত লচি পোদ্দার কালীপুজোর মর্মকথা! শহরের হবিবপুরের লচি পোদ্দার কালী বাড়ির কালীপুজো প্রায় চারশো বছরের পুরানো। এই পুজো অবিভক্ত মেদিনীপুরবাসীর কাছে ধাপে ধাপে অর্জন করেছে খ্যাতি। কথিত আছে, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ দে একদিন স্বপ্নাদেশ পান, এই পুজোর সূচনা করার বিষয়ে। দিন কয়েক পরেই মধ্যরাতে লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র কানে ভেসে আসে নুপুর পরিহিতা এক মহিলার বাড়ির মধ্যে সশব্দ বিচরণের আওয়াজ। স্বপ্নাদেশে বলা হয়, নুপুরের শব্দ (নিক্কন) যেখানে থামবে, সেখানে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আদেশ অনুয়ায়ী সুচনা হয় এই বাড়ির কালীপূজোর। তবে, লচি পোদ্দার নাম হয় লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র নামের অংশ থেকেই। লক্ষ্মী থেকে ‘লছমি’ আর লছমি থেকে ‘লচি’। তিনি পেশায় ছিলেন ‘পোদ্দার’। তাই তাঁর নাম থেকেই পুজোর নাম হয়, লচি পোদ্দার কালী বাড়ির পুজো।
পরম্পরা অনুয়ায়ী, পুজোতে বিভিন্ন সবজি বলি দেওয়া হয়। দশমী তিথি থেকেই সূচনা হয় পুজানুষ্ঠানের। এখনও প্রথা অনুযায়ী, একটি অবিবাহিতা মেয়ের সারা বছরের ভোজনের পরিমাণ স্বরূপ ১০৮ কেজি চাল উৎসর্গ করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। বংশানুক্রমে, বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে বংশের ছয়জন উত্তরসূরী বা সেবাইত। পরিবারের অন্যতম সেবাইত অভিজিৎ দে জানান, “পূজোর আচার নিয়মে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে, কোভিড বিধিনিষেধের জন্য কিছু অনুষ্ঠানে কাট ছাট করতে হয়েছে। যেমন, মেদিনীপুরের লচি পোদ্দার কালীবাড়ির পুজোর নিরঞ্জন দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন অসংখ্য মানুষ; কিন্তু, কোভিড বিধিনিষেধের জন্য গত বছর থেকে বন্ধ করা হয়েছে প্রথা অনুযায়ী গরুর গাড়িতে নিরঞ্জন। পুজোর একদিন আগে থেকেই পুজোকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, সেগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু, পুজোর নিয়মে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তবে, মন্ডপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবারও। মন্দিরের বাইরে লাগানো LED পর্দাতেই দর্শন করতে হচ্ছে প্রতিমা।”