দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ অক্টোবর:”খুনিদের কোনও রং হয়না, খুনি খুনিই! খুন করলে, অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। এ ক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলবে, আইনের কাজে দল হস্তক্ষেপ করবে না!” গত ২৬ অক্টোবর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ে যুব নেতা খুনে গ্রেফতার করা হয়েছিল, একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত ৩ যুবককে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগড়ের অভিরামপুরে তৃণমূলের যুবনেতা সৌভিক দোলই-কে গুলি করে খুন করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর অভিযুক্ত তিন যুবক, যথাক্রমে- সীতারাম মুর্মু, অমিত মণ্ডল ও সন্দীপ মেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগড় থানার পুলিশ। ঘটনায় ধৃত তিনজনকে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) তোলা হয় খড়্গপুর মহকুমা আদালতে। খড়্গপুর মহকুমা আদালতের বিচারক তিনজনের মধ্যে অভিযুক্ত সীতারাম মুর্মুকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত এবং অমিত মন্ডল ও সন্দীপ মেটিয়াকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই ঘটনার বিষয়ে বিবৃতি দিতে গিয়েই ধৃত তিনজনকে ‘নিজেদের দলের কর্মী’ হিসেবে মানতে চাননি সুজয়। বরং তাদেরকে ‘খুনে অভিযুক্ত অপরাধী’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় অমিত, সন্দীপ ও সীতারাম তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে! বর্তমান বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্টের অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিল তারা। তবে, বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক ২-৩ মাস আগে, তারা তৃণমূলের সংসর্গ ত্যাগ করে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে। ঠিক সেরকম একটা সময়েই গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ খুন হয় তৃণমূলের স্থানীয় যুবনেতা বছর ৪০ এর সৌভিক দোলই। পিঠে গুলি লাগে তার। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়! তবে, সেই সময় কেন অভিযুক্ত তিন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তা নিয়ে রহস্য আছে। যদিও, এ নিয়ে পুলিশের বক্তব্য, “তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। তদন্তে ওই খুনে তিনজনের যোগ পাওয়া গেছে, তাই গ্রেফতার করা হয়েছে!” জেলা তৃণমূলেরও একই বক্তব্য। তবে, হঠাৎ করে, এই গ্রেপ্তারি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নারায়ণগড়ে। রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করছে, নারায়ণগড়ে যখন গোষ্ঠী বিবাদ তুঙ্গে, সেই সময় দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের ‘স্পষ্ট বার্তা’ দিতেই জেলা তৃণমূলের অঙ্গুলিহেলনে পুলিশ তিন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে! কারণ, জেলার রাজনীতিতে ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগড়ে গোষ্ঠীবিবাদ, খুনখারাবি, বোমাবাজি লেগেই থাকে। এক্ষেত্রে, এবার থেকে যে দল, গোষ্ঠী এসব কিছুই দেখা হবেনা, পরোক্ষে সেই ‘বার্তা’ই দিয়ে দেওয়া হল, তা বলাই বাহুল্য! জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র বক্তব্যেও সেকথাই উঠে এসেছে। তবে, শুধু নারায়ণগড় নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন এই তৃণমূল যে “আগের থেকে অনেক আলাদা” তা বারবার উঠে এসেছে স্বয়ং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের মুখেই! আর, তাঁর পথ ধরেই জেলাজুড়ে ‘স্বচ্ছতা’ ও ‘কঠোর পরিশ্রম’ এর বার্তা ছড়িয়ে দিতে যেন বদ্ধপরিকর মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরাও।