মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ অক্টোবর: হঠাৎ করেই শিশুদের ওষুধের জন্য তীব্র হাহাকার সৃষ্টি হল খোদ জেলা শহর মেদিনীপুরে! খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু মেদিনীপুর শহর বা পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, রাজ্য জুড়েই শিশুদের ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষত, কাশি ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ ও ইনহেলার (লিভোলিন/levolin, বুডিকর্ট/Budecort প্রভৃতি) এর তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর শহর সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়! “হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়াতেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন”, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান তথা আইএমএ-র জেলা সভাপতি ডাঃ তারাপদ ঘোষ। শহরের প্রায় সমস্ত ওষুধ দোকানেই পাওয়া যাচ্ছেনা শিশুদের কাশি ও শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কাফ সিরাপ ও ইনহেলার। একবাক্যে স্বীকার করছেন শহরের ওষুধের ব্যবসায়ী থেকে জেলা শহরের সমস্ত নামকরা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, খুব একটা কমেনি শিশুদের জ্বর-সর্দির প্রকোপ! শুধু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই এখনও প্রতিদিন ২৫-৩০ জন করে জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে বলে জানা গেছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। সেখানেও যে ইনহেলার সহ কাফ সিরাপের অভাব সৃষ্টি হয়েছে গত ২-১ সপ্তাহে, তা মেনে নিচ্ছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু থেকে শুরু করে শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ। বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে বারবার জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু, এখনও যোগান স্বাভাবিক হয়নি বলেও মানছেন সকলে! এদিকে, শহরের ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, “সমস্ত ওষুধ উত্তরবঙ্গের দিকে চলে যাচ্ছে, তাই এখানে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।” বিষয়টি আদৌও তা নয় বলে জানিয়েছেন, জেলার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, চাহিদা অনুযায়ী হয়তো যোগান দিতে পারছেনা কোম্পানিগুলি! কিন্তু, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যে বিষয়টা যে দুঃশ্চিন্তার, তা মানছেন সকলেই!

thebengalpost.net
শহরের ওষুধ দোকানগুলোতে শিশুদের ওষুধের সঙ্কট (প্রতীকী ও নিজস্ব ছবি) :

অন্যদিকে, এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে শিশু ভর্তি আছে প্রায় ৮০ জন (SNCU বাদ দিয়ে)। অন্যদিকে, জেলার অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল (ঘাটাল, খড়্গপুর, শালবনী প্রভৃতি) এবং বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি আছে জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা। মেদিনীপুর শহরের অন্তত ৮-১০ জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে প্রতিদিন জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভোগা গড়ে অন্তত ৫০ জন শিশুকে নিয়ে ভিড় করছেন তাদের অভিভাবকরা। কিন্তু, সমস্ত অভিভাবক থেকে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না কোনো দোকানেই’! মেদিনীপুর শহরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপক মাসান্ত জানালেন, “শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত ওষুধ ও ইনহেলারের একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে! এদিকে, শিশুদের ক্ষেত্রে বিকল্প সবধরনের ওষুধ নিরাপদও নয়। এই পরিস্থিতি দ্রুত কেটে যাওয়া উচিৎ।” অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষও মানছেন, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও অভাব আছে। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। যতটা আমরা চাইছি, ভেন্ডররা ততটা দিতে পারছেন না! তবে, জ্বরের প্রকোপ সামান্য কমেছে, এটা একটু ভালো লক্ষণ। আশা করছি, আর এক-দু’ সপ্তাহের মধ্যে যোগানও স্বাভাবিক হবে”। একই কথা জানিয়েছেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডুও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন একটা সময় বড়দের জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টের ওষুধের সঙ্কট তৈরি হয়েছিল মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার জন্য। বিষয়টা কি সেরকমই? মানছেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু থেকে শুরু করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। ডাঃ কুন্ডু জানিয়েছেন, “শুধু আমাদের জেলা নয়, সারা রাজ্যেই শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।” এই বিষয়ে জেলার CMOH ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে এবং ডিসিজিআই (Drugs Controller General of India)-কে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।”