দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৩ অক্টোবর: বিমান চলাচলে অসুবিধার অভিযোগের প্রেক্ষিতে লেক টাউন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বুর্জ খলিফা’র আদলে হওয়া কৃত্রিম বহুতলের যাবতীয় লেজার লাইট বন্ধ করে দেওয়া হল। দমদম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের করা অভিযোগের ভিত্তিতে আলো নিভানোর সিদ্ধান্ত শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের। যার ফলে এখন থেকে যে সকল দর্শনার্থীরা যাবেন তাঁদের সেই লেজার লাইটের আকর্ষণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে, তিনটি ভিন্ন বিমান সংস্থার পাইলট দমদম বিমান বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (ATC) কাছে লেজার লাইট নিয়ে অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, লেজার লাইটের জন্য বিমান অবতরণের সময় অসুবিধা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের তরফে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে আপত্তি জানানোর পরই সব লেজার লাইট বন্ধ করে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, অতিমারী আবহে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সকলেই এবার কলকাতার ভিআইপি রোড-মুখী হয়েছিলেন। সৌজন্যে, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। সেখানে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে “বুর্জ খলিফা”-র আদলে। দুবাইয়ে অবস্থিত বিশ্বের এই সর্বোচ্চ বাড়ির শিরোপা পাওয়া ভবন তৈরি হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে এই সর্বজনীনে। কিন্তু, ১৪০ ফুট উঁচু ওই মণ্ডপে লাগানো লেজার আলোয় বিমান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে আপত্তি ওঠাতেই তা নিভিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। উল্লেখ্য যে, এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা রাজ্যের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসু। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি। তবে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও একটি জায়গায় লেজার আলো থাকায় বিমান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে সোমবার রাতে তিন জন ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার পাইলট অভিযোগ জানান। জানা গিয়েছে, পুলিশের পাশাপাশি অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকেও আপত্তি জানানো হয়। তার পরেই আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এবার জেনে নিন, বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন দুবাইয়ের (সংযুক্ত আরব আমিরাশাহী) আসল “বুর্জ খলিফা” সম্পর্কে কিছু কথা বা তথ্য। এটির উচ্চতা ৮২৮ মিটার (২,৭১৭ ফু)। এটি তাইওয়ানের তাইপে ১০১ টাওয়ার থেকে ১,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতর। “তাইপেই ১০১” ভবনটির উচ্চতা ৫০৮ মিটার (১,৬৬৭ ফু)। ২০০৪ থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর উচ্চতম স্থাপনা। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অবস্থিত উইলিস টাওয়ারটি ৪৪২ মিটার (১,৪৫০ ফু) উঁচু। “বুর্জ খলিফা” এতই উঁচু একটি ভবন যে নিচতলা আর সর্বোচ্চ তলার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০° সেলসিয়াস। “বুর্জ খলিফার” নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে, আর কাজ শেষ হয় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে। এটি তৈরীতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। এর বহিঃপ্রাঙ্গনে অবস্থিত ফোয়ারা নির্মাণেই ব্যয় হয়েছে ১৩৩ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। এই ভবনে ১,০৪৪টি বাসা (এপার্টমেন্ট) আছে। ৪৩তম এবং ৭৬ তম তলায় আছে দুটি সুইমিং পুল। আরো আছে ১৬০ কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল। ১২৪তম তলায় দর্শকদের জন্য প্রকৃতি দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৬৩ তলার এই ভবনে সংস্থাপিত কোনো কোনো লিফটের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ মাইল। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে শিলান্যাসের পর থেকে অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ অগ্রসর হয়েছে। এমনো দিন গেছে যে দিন ১২ হাজার নির্মাণ কর্মী একযোগে নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিল। সে সময় প্রতি তিন দিন পর পর একটি ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবনের শিরোপা পেয়েছে। অন্যদিকে, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ (ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ, মুম্বাইয়ের পরেই) ভবন হল- দ্য ৪২ (The 42)। জওহরলাল নেহরু রোডে অবস্থিত এই ভবন-টি ৬৫ তলা এবং ২৬০ মিটার (৮৫০ ফুট) উঁচু। এটি তৈরির সময়ও কলকাতা বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছিল, পরে তা বিমানবন্দর ছাড়পত্র পায়।