মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ অক্টোবর: এ যেন এক বটগাছের ‘প্রতিস্থাপন’ নয়, কর্ণগড় মন্দিরের সৌন্দর্য আর অগণিত মানুষের আবেগেরও পুনরুদ্ধার! সত্যিই নতুন এক ‘ইতিহাস’ তৈরি হল রাণী শিরোমণি’র ঐতিহাসিক কর্ণগড়ে! একটানা প্রবল বর্ষণ আর অনভিজ্ঞ হাতে সংস্কারের প্রচেষ্টা- এই দুইয়ের ধাক্কায় বুধবার কাকভোরে উপড়ে পড়া সুপ্রাচীন বটগাছ-টিকে পুনরায় স্থাপন বা প্রতিস্থাপন (Re-placemenent) করা হল, শনিবার ‘গান্ধী জয়ন্তী’ (২ অক্টোবর)’র পুণ্য লগ্নে। জেলা প্রশাসন, ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি এবং বনদপ্তরের যৌথ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় আজ এই ঐতিহাসিক কাজটি সম্পন্ন হল, জঙ্গলমহল শালবনীর কর্ণগড় মন্দির প্রাঙ্গণে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে, মেদিনীপুর বনবিভাগের সহায়তায় আড়াবাড়ি রেঞ্জের পক্ষ থেকে, সেই একই স্থানে বটগাছটিকে প্রতিস্থাপন করা হল। কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে হলেও, অবিভক্ত মেদিনীপুরে এই প্রথম এই ধরনের ‘ঐতিহাসিক’ কাজ হল। স্বভাবতই আবেগাপ্লুত অবিভক্ত মেদিনীপুরের সকল প্রকৃতিপ্রেমী, পরিবেশ প্রেমী, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে আপামর শালবনী ও মেদিনীপুর বাসী!
রাণী শিরোমণি-র স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক কর্ণগড় মন্দিরের (দেবী মহামায়া-র মন্দির) সৌন্দর্যের অনেকখানি জুড়ে ছিল, প্রবেশদ্বারে অবস্থিত সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ-টি। আর, একে ঘিরে কর্ণগড়বাসী ও দর্শনার্থীদের ছিল এক অনন্য আবেগ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক! সেই গাছ উপড়ে পড়ায় হতাশ ও শোকাতুর হয়েছিলেন সকলেই। দাবি তুলেছিলেন প্রতিস্থাপনের। অবশেষে তা সম্পন্ন হল শনিবার দুপুরে। মেদিনীপুর বনবিভাগের সহায়তায় আড়াবাড়ি ও ভাদুতলা রেঞ্জের উদ্যোগে প্রতিস্থাপনের এই কাজটি করা হয়েছে। আড়াবাড়ির রেঞ্জ অফিসার মলয় কুমার ঘোষ এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের বন ও বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ, মৌপাল বিটের বিট অফিসার প্রণব কুমার দাস এবং মন্দির কমিটির সভাপতি আকিঞ্চন সিংহ ও সম্পাদক জয়ন্ত কুমার ঘোষ। আড়াবাড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মলয় কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, “গাছটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এবার, আগামী ৬ মাস ধরে উপযুক্ত পরিচর্যা এবং পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। বনদপ্তর ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে যৌথভাবে পরবর্তী এই কাজ করা হবে আগামী দিনগুলোতে।” জেলার বন ও বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ জানিয়েছেন, “শতাব্দী প্রাচীন এই গাছটিকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে ছিল। তাকে গুরুত্ব দিয়ে, বনদপ্তরের আন্তরিক সহযোগিতা ও উদ্যোগে এই কাজটি করা হয়েছে। আশা করছি, গাছটি আবার আগের মতোই মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে এবং মানুষকে ছায়া প্রদান করবে।”