দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ অক্টোবর: ফের করোনা-র প্রকোপ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ হস্টেলে। ইতিমধ্যে ৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানা গেছে। জ্বরে আক্রান্ত আরও একাধিক জন। বেশকিছু জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাঁরা ভাইরাল বা মরশুমি জ্বরে ভুগছেন বলে জানা গেছে। আবার, অনেকেই ভয়ে টেস্ট করাননি! বিষয়টি নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়েছেন, “সংক্রমণ ছড়ানো শুরু হয়েছে। তাই হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অনেকেই চলে গেছে। খুব স্বল্পসংখ্যক যাদের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা আছে, তারাই থাকবে। অফলাইনে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস হবে আগের মতোই।” মেডিক্যাল কলেজের অভিজ্ঞ চিকিৎসক তথা আইএমএ-র জেলা সম্পাদক ডাঃ কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত জানিয়েছেন, “এক-দেড় মাস হল অফলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই সংক্রমণের প্রভাবে ফের ক্লাস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জানা গেছে, নার্সিং হস্টেলেও ২-১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। তবে, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “জ্বর থাকলে বাধ্যতামূলকভাবে টেস্ট করাচ্ছি আমরা। অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ভয়ে টেস্ট করাচ্ছেনা। মেদিনীপুর মেডিক্যালেই যেহেতু করোনা-র উন্নত ওয়ার্ড আছে, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। তাই, জ্বর আসার আগেই বাড়ি চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর, যাদের জ্বর আছে, তাদের টেস্ট করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতেই কিছুজনের পজিটিভ এসেছে।” তবে, এইসময়ে এমনিতেই মরশুমি জ্বর বা ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন মেডিক্যালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। আর, সেই জ্বরও যথেষ্ট সংক্রামক, তাই ভেবেচিন্তেই অফলাইন ক্লাস বন্ধ ও হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ হস্টেল :

thebengalpost.net
মাতৃমা’র সামনে ভিড় :

এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যেন জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের ঢল নেমেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। একেকটি বেডে ভর্তি একাধিক শিশু! বৃহস্পতিবার রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত শুধু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নতুন করে (একদিনে) ২২ জন শিশু ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়তে হয়নি বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান তথা আইএমএ-র জেলা সভাপতি ডাঃ তারাপদ ঘোষ থেকে শুরু করে মেডিক্যালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র ঘোষ। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। অনেকেই সঙ্কটজনক হয়ে যাচ্ছে, তাদের ভেন্টিলেশনে এবং পিকু-তে রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বেশিরভাগ জনই সুস্থ হয়ে উঠছে, তবে বেশ কষ্টসাধ্য চিকিৎসা! গত এক সপ্তাহের মধ্যে অত্যন্ত সঙ্কটজনক ১ জন শিশু’রই মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই জ্বরের জন্য প্রাথমিকভাবে আর এস ভাইরাস (Respiratory Syncytial Virus) অথবা ইনফ্লুয়েঞ্জা-কে দায়ী করা হলেও, সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য, ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে (বৃহস্পতিবার) মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডে ৮১ জন ভর্তি আছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কফ-কাশি নিয়ে। তুলনায় সঙ্কটজনক ১২ জন ভর্তি আছে পিকু (Pediatrics Intensive Care Unit)-তে। মোট ৯৩ জন শিশু ভর্তি আছে মাতৃমা-র শিশু ওয়ার্ডে। অন্যদিকে, নবজাতকদের ওয়ার্ডে বা নিকু (NICU)-তে আরও ৮৫ জন ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যেও কয়েকজনের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট আছে বলে জানা গেছে। ‘এক বেডে একাধিক শিশু’ ভর্তি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “২-৩ দিনের মধ্যেই বিধান ব্লকে যে নতুন শিশু ওয়ার্ড তৈরি হচ্ছে, সেখানে অন্তত ৫০-৬০ টি বেড চালু করে দিতে পারব।” তবে, পুরো শিশু ওয়ার্ড-টিই বিধান ব্লকে চলে আসুক, এমনটাই চাইছেন শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা। কারণ, ২ দিকে গিয়ে চিকিৎসা করা বেশ সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে বলে তাঁদের অভিমত। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, “আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে নতুন শিশু ওয়ার্ড পুরোপুরি চালু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার আগে, করোনা আক্রান্ত এবং সঙ্কটজনক কিছু শিশু-কে যাতে এদিকে রাখা যায়, সেই চেষ্টা চলছে। এর ফলেও, মাতৃমা বিভাগের উপর চাপ কিছুটা কমবে।”

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ড :