দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ আগস্ট: এখন কিছুটা ‘স্থিতিশীল’ আছেন বলে জানা গেছে। শালবনীর চাঁদাবিলা (বিষ্ণুপুর ২ নং অঞ্চল) গ্রামের SSK (শিশু শিক্ষা কেন্দ্র) শিক্ষিকা জ্যোৎস্না টুডু। গত মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) “অন্যায়ভাবে” ৭০০ কিলোমিটার (প্রায়) দূরে বদলির অভিযোগে, ‘বিকাশ ভবন’ এর সামনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন যে ৫ শিক্ষিকা, তাঁদের মধ্যে অন্যতমা ছিলেন শালবনীর জ্যোৎস্না। এই মুহূর্তে SSKM (পিজি) হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে শালবনী থানায় ফোন করে জানা গেল, কলকাতা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী কিছুটা ভালো আছেন তিনি। তবে, দরিদ্র ও দীনমজুর পরিবারে এখনও উদ্বেগ আর দুঃশ্চিন্তা! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই চাকরির স্থায়ীকরণ-সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন, শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। এমতাবস্থায়, ৫ শিক্ষিকাকে (মোট ১৭ জন) উত্তরবঙ্গে বদলির অভিযোগ ওঠে। তারই ভিত্তিতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে, দেখা মেলেনি বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। তারপরই, বিষের শিশি বের করে পুলিশ আর সংবাদকর্মীদের চোখের সামনে তা খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাঁরা! সেই দলে ছিলেন জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের প্রত্যন্ত জঙ্গল ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত চাঁদাবিলা গ্রামের জ্যোৎস্না-ও। জঙ্গলঘেরা দারিদ্র্য অধ্যুষিত গ্রামে বুধবার এই খবর পৌঁছতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে! মাথায় হাত পড়ে তাঁর পরিবারে। এখনও স্তম্ভিত পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জ্যোৎস্না যখন দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ে তখন তাঁর বাবা দুঃখীরাম টুডু মারা যায়। দুই নাবালক ছেলে ও আর মেয়ে-কে নিয়ে বিপদে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধা মা বারি টুডু গরু-ছাগল পালন করে সংসার চালানো শুরু করেন। সেই সময় বাম জমানায় মেয়ে (জ্যোৎস্না) শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে (SSK) কাজ পায়। সেই জ্যোৎস্না’র ঘাড়েই এখন সংসারের দায়িত্ব। দুই বিবাহিত ভাই সমর ও বাদল দীনমজুরি করে। অবিবাহিত দিদিও তাদের সঙ্গেই থাকেন বলে কোনোমতে ৭-৮ জনের সংসার চলে যায়। এদিকে, এস এস কে শিক্ষিকাদের এখন বেতন বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ওই টাকা বেতন নিয়ে জঙ্গলমহল বা সমতল থেকে পাহাড়ে যেতে হবে! এর থেকে “আত্মহত্যাই ভালো”, হয়তো এটাই মনে করেছিলেন ৪৫ উর্ধ্ব শিক্ষিকারা (৩ জনের বয়স ৫৫ এর থেকেও বেশি বলে জানা গেছে)! আত্মহত্যার প্রচেষ্টা-কে কোনো মহলই সমর্থন করেনি, করা উচিতও নয়; তবে এসএসকে শিক্ষিকাদের বদলি? এ যেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবলদের বর্ডারে যুদ্ধ করতে পাঠানোর মতোই ‘অদ্ভুত’ সিদ্ধান্ত, এটাও মনে করছেন শিক্ষিত মহল এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। তার উপরে শিক্ষামন্ত্রী’র “বিজেপির ক্যাডার” মন্তব্যে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে! এই পরিস্থিতিতে, জ্যোৎস্নার দুই ভাই সমর ও বাদল এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র সাথে দেখা করার জন্য তাঁর শালবনীর ভীমপুরের বাড়ি আর চন্দ্রকোনা রোডের অফিসে গিয়েও দেখা পায়নি। দুই ভাই নাকি শাসকদলেরই সমর্থক। একসময় জ্যোৎস্না-ও তাই ছিলেন! বর্তমানে, শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, সক্রিয়ভাবে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তবে অরাজনৈতিক শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যা। সেই জ্যোৎস্না সহ এসএসকে শিক্ষিকাদের কেন এতদূরে বদলি করা হল, ‘জবাব’ চাইছেন তাঁর দুই ভাই ও বৃদ্ধা মা! চোখের জল মুছতে মুছতে, মা বারি টুডু নাকি এখনও সমানে বলে চলেছেন, “মেয়েটা বলে গেলো মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে কলকাতা যাচ্ছি। তারপর কোথা থেকে কি হয়ে গেল! আমরা তো এই দলকেই ভোট দিই। তবু এতো শাস্তি!”
সংযোজন: এদিকে, আত্মহত্যার চেষ্টা করা পাঁচ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার পাল্টা আইনের দ্বারস্থ শিক্ষিকারাও। কোন যুক্তিতে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বদলি করা হয়েছে? এই প্রশ্ন তুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ৫ শিক্ষিকা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। বদলির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আরও কয়েকজন মামলা করেছেন বলে খবর। আগামী সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।