দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ জুলাই: একের পর এক ডাইনি-কাণ্ডে লজ্জায় মাথা হেঁট হচ্ছে জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের। দিনকয়েক আগেই উঠে এসেছিলো, মেদিনীপুর সদর ব্লকের এক শিক্ষক পরিবারের ৫ বছর ধরে ঘরছাড়া থাকার অভিজ্ঞতার কথা। আর, এবার ডেবরা ব্লকে “ডাইনি” অপবাদ দিয়ে সালিশি সভা ডেকে এক মহিলাকে মারধর করার অভিযোগ উঠলো! প্রাণের ভয়ে এই মুহূর্তে ঘরছাড়া পুরো পরিবার। জানা গেছে, ডেবরা ব্লকের ৯ নং ষাঁড়পুর-লোয়াদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূঁইয়াবসান গ্রামের চাঁদমণি মুর্মু (৩৪) নামে এক গৃহবধূর উপর এই অত্যাচার হয়। গ্রামের এক পরিবারের সঙ্গে অশান্তি’র পর ওই পরিবারের এক বালকের জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপরই, চাঁদমণি ও তার স্বামী সনাতনের উপর অত্যাচার হয়। সালিশি সভা ডেকে ‘জরিমানা’ করা হয়। এরপর, টাকা না দেওয়ায় মারধর করা হয় এবং হুমকি দেওয়া হয় গ্রামে থাকা যাবে না! কোনোক্রমে গ্রাম থেকে সপরিবারে পালিয়ে এসে সনাতন শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সহায়তায় শনিবার সন্ধ্যায় ডেবরা থানায় অভিযোগ জানায় ওই পরিবার। ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ওই মহিলার চিকিৎসা করানো হয়েছে। মহিলার স্বামী সনাতন’ও খুব একটা সুস্থ নয়। আছে এক নাবালক পুত্র। অসহায় পরিবার ভয়ে আর গ্রামেই ফিরতে চাইছেনা!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডেবরার লোয়াদা সংলগ্ন ভূঁইয়াবসান গ্রামের বাসিন্দা সনাতন মুর্মু ও চাঁদমণি মুর্মু। তাদের এক নাবালক পুত্র’ও আছে। গত মাসে হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়ে ঘরে ফিরেছে সনাতন। দিনমজুরি করে সংসার চলে তাদের। সম্প্রতি, একটি হাঁস মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে পাশের বাড়ির সাথে অশান্তি হয় চাঁদমণি’র। এরপরই নাকি ওই পরিবারের এক বালকের জ্বর হয়। তারপরই চাঁদমণি’কে “ডাইনি” সাব্যস্ত করা হয়। সালিশি সভায় ডেকে প্রথমে জরিমানা ও পরে মারধর করা হয়। অসুস্থ স্বামী ও নাবালক পুত্র’কে নিয়ে আহত চাঁদমণি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসে। যদিও এ নিয়ে অভিযুক্ত পরিবারের এক সদস্যার দাবি, “একটি হাঁস মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়। তখন আমি সনাতনের স্ত্রী’কে গালিগালাজ করি। তখন ও বলে পাঁচ দিনের মধ্যে তোর ছেলে মারা যাবে! তখন আমি ওকে বলেছিলাম তুই মানুষ না ডাইনি? এর বেশি আর কিছু হয়নি। কোনো সালিশি এখনও হয়নি।” যদিও, এই ঘটনায় সনাতন ও চাঁদমণি’কে ঘরছাড়া হতে হয় বলে পুলিশও স্বীকার করে নিয়েছে। ডেবরার সি আই কৃষ্ণেন্দু হোতা ‘মারধর’ এর অভিযোগ সম্পর্কে কিছু না বললেও, অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের পর গ্রামে পুলিশ টহল দিয়ে এসেছে বলেও জানা গেছে। তবে, এভাবে একের পর এক গ্রামে ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করার ঘটনায় জেলাজুড়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে! অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বছর ছয়েক আগে ডেবরা ও দাসপুর সীমানায় ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে ৩ মহিলাকে পুঁতে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা’র পরও কি মানুষের মনে “সচেতনতা” তৈরি হয়নি! প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।