thebengalpost.in
মেদিনীপুর শহর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে "ডাইনী" অপবাদে ৫ বছর ঘরছাড়া "শিক্ষক পরিবার" :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই “ডাইনী” অপবাদে প্রায় ৫ বছর ধরে ঘরছাড়া এক আদিবাসী পরিবার। পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও, মহকুমা শাসক, আইসি থেকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দপ্তরে বারবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি! ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাচরা অঞ্চলের খালডাঙ্গী গ্রামের। ডাইনি অপবাদে গ্রামের এক আদিবাসী শিক্ষক সহ তাঁর গোটা পরিবার গ্রাম ছাড়া প্রায় ৫ বছর ধরে। অসহায় পরিবার আজও প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন, সমস্যা মিটিয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। বর্তমানে, ওই আদিবাসী পরিবারটি নিজেদের গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরমণি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

thebengalpost.in
মেদিনীপুর শহর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে “ডাইনী” অপবাদে ৫ বছর ঘরছাড়া “শিক্ষক পরিবার” :

জানা যায়, এই ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর। গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় কলকাতায়। তারপর ওই গ্রামের মোড়লরা জানায়, তারা জানতে পেরেছে শিক্ষক মঙ্গল হাঁসদার বাবা সাবে হাঁসদা ও মা পুটকি হাঁসদা ডাইন বা ডান বা ডাইনী! শিক্ষক মঙ্গল জানায়, “গ্রামের এক ব্যক্তি যিনি কলকাতায় থাকতেন, তিনি অসুখে মারা যান। তারপরেই ২১শে সেপ্টেম্বর আমার মা-বাবাকে ডাইন অপবাদ দিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। সেখানে গ্রামের মোড়লরা বলে, জানগুরুর কাছে গিয়ে তারা জেনেছে, আমার মা পুটকি হাঁসদা এবং বাবা সাবে হাঁসদা ডাইন। সভায় হাত-পা পিছমোড়া করে বেঁধে চলে বেধড়ক মারধর। বাঁধা হয় আমার দাদা অমিত হাঁসদা ও আমাকেও। ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হয়। কিছুক্ষন পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, তুই মাস্টার, তুই যা টাকা নিয়ে আসবি। ছাড়া পেয়ে আমি আমাদের মাঝি পরগনার রবি মুর্মুর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশের সহযোগিতায় সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তারপর থেকেই আমারা শিরমণিতে মামাবাড়িতে দিন কাটাচ্ছি।” লজ্জাজনক এই ঘটনার বিবরণ দিতে দিতে মঙ্গলের মা পুটকি হাঁসদা, বাবা সাবে হাঁসদার দু’চোখ জলে ভরে আসে। পুটকি ও সাবে বলেন, “আমাদের ছোট ছেলেকে বিএ পাঁশ করিয়েছি। ডিএলএড পড়িয়েছি। স্কুলে প্যারা টিচারের চাকরি করে। আমরা গ্রামে কিছু জমিও কিনেছিলাম। এসব উন্নতি দেখে গ্রামের লোক সহ্য করতে পারেনি। সেকারনেই এই অপবাদ দিয়ে অত্যাচার বলে মনে হয়।”

গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় তৃণমূল নেতা চুনারাম হাঁসদা বলেন, “বহুদিন আগে ওদের সঙ্গে ডাইনি নিয়ে গ্রামের একটি সমস্যা হয়েছিল। থানায় বসে একবার মিটমাটও হয়েছিল। তারপর ওরা বাড়ি এসেছিল। তারপর আবার গোলমাল হয়েছে।” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” যদিও শিক্ষক মঙ্গল হাঁসদা বলেন, “পাঁচ বছরে শাসক দলের বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার যেখানে যত জায়গায় আবেদন করেছি, তার সমস্ত কাগজপত্র আমার কাছে আছে।” তিনি বলেন, “একবার থানায় গ্রামের লোকজনদের নিয়ে বসে আলোচনা করে মিটমাট করা হয়েছিল। ২০২০ সালের জুন মাসে পুলিশ বাড়ির তালা ভেঙে আমাদের গ্রামে পৌঁছে দিয়ে এসেছিল। তারপর জমিতে চাষ করতে গেলে আবার আমাদের মারর করে তাড়িয়ে দেয়।” অপরদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিডিও সুদেষ্ণা দে বলেন, “কিছুদিন আগে মেদিনীপুরে এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আজ সকালেই ঘটনার কথা শুনলাম। এটি অনেক দিনের ঘটনা। যদি সত্যি এমন কিছু ঘটে থাকে! আমি খোঁজ নিয়ে, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”

thebengalpost.in
মেদিনীপুর শহর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে “ডাইনী” অপবাদে ৫ বছর ঘরছাড়া “শিক্ষক পরিবার” :