দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ জুন: একবছর ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার! রীতিমতো “একঘরে” করে রাখা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের ৩ টি পরিবারকে। পানীয় জল আনতে যেতে হয় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে, ধান কুটোতে যেতে হচ্ছে ৫ কিলোমিটার দূরে, গ্রামের মন্দিরে ওঠা বারণ, গ্রামের দোকানে যাওয়া বারণ, এমনকি বিয়েবাড়ি কিংবা অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানের উপরও নিষেধাজ্ঞা! সর্বোপরি, চাষের কাজ বন্ধ বিগত একবছর ধরে। এমনটাই অভিযোগ ওই পরিবারগুলির। এমনকি, অন্য পরিবারের কেউ যদি তাঁদের সাথে যোগাযোগ রাখেন বা বাড়িতে যান, তাদেরকেও সামাজিক বয়কটের শিকার হতে হচ্ছে বলে জানালেন এক গ্রামবাসী! মধ্যযুগীয় এই ফতোয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পরই নিন্দার ঝড় সর্বত্র। জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার ডেবরা ব্লকের ১০/১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কালুয়া আকুব (কালুয়া বৃন্দাবন) গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু দাস গোস্বামী ও নকুল হাইতের পরিবার। ৬ মাস সামাজিক বয়কটের শিকার নারায়ন চন্দ্র গাঁতাইত, বাদল গাঁতাইত, আশোক গাঁতাইত, অজিত গাঁতাইত, আসিত গাঁতাইতের পরিবার। কৃষ্ণেন্দু দাস গোস্বামী’র দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তাঁর পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করে রেখেছে। দাবি গ্রামের এক রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে গ্রামের লোকের সাথে তাঁর বচসা বাধে এবং তারপর থেকেই প্রায় এক বছর ধরে তাঁকে সামাজিকভাবে বয়কট করে রেখেছে গ্রামের মানুষরা।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, নতুন রাস্তা হওয়ার জন্য দুই জমির মালিককে রাস্তার জন্য জমির কিছুটা অংশ দিতে হবে দাবি ছিল শাসকদল ঘনিষ্ঠদের। জমির মালিক কৃষ্ণেন্দু দাস গোস্বামী ও নকুল হাইত জানান, “আমরা রাস্তার জন্য জমি দেবো তবে দুই পাশের জমি নিতে হবে। একপাশের জমির অংশ এতটা কেন!” এই নিয়ে শুরু হয় গ্রামবাসীদের মধ্যে বচসা। সেটাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের দুটি পরিবারকে সামাজিক বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানানোর পরও কোন সুরাহা হয়নি! বরং ওই পঞ্চায়েতের কাছ থেকেও দুটি পরিবারকে বঞ্চনার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। বয়কটের শিকার একটি পরিবারের গৃহকর্ত্রী ভবানী হাইত অভিযোগ করেন, “আমার দুটি মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে, বারংবার বিয়ে আটকে দেয় ওই গ্রামের কিছু মানুষ। এমনকি আমাদের একশো দিনের কাজ থেকেও বঞ্চিত কর হয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ির জন্য বালি নিয়ে আসতে দেওয়া হয়নি।” কৃষ্ণেন্দু’র স্ত্রী সবিতা দাস গোস্বামীর অভিযোগ, “আমাদের একবছর ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে। মেয়ের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানও করতে দেওয়া হয়নি।” এরই মধ্যে আর একটি নতুন রাস্তার জন্য ওই একইরকম ভাবে জমি দিতে হবে বলে জানানো হয় কয়েকটি পরিবারকে। ১৩ টি জন জমির মালিক জমি দিতে না চাওয়ায় তাদেরও বিভিন্ন সরকারি ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অসিত কুমার গাঁতাইত নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, “গত ৫-৬ মাস ধরে চাষবাস করতে দেওয়া হয়নি। বয়কট করে রেখেছে।” সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত গোবিন্দ সামাইয়ের দাবি, “সামাজিক বয়কটের অভিযোগ সম্পূর্ন ভিত্তিহীন, আমরা এই বয়কট কোনভাবে বরদাস্ত করি না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওনাদের ডাকা হলে উনারা আলোচনা সভায় উপস্থিত না হয়ে, বিভিন্ন জায়গায় এইরম ভাবে অভিযোগ জানান।”