মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ জুন: “তৃতীয় ঢেউ” এর আশঙ্কা থাকলেও, নিশ্চয়তা নেই! ভারতবর্ষে তথা পশ্চিমবঙ্গে এই ঢেউ আছড়ে পড়বে কিনা, পড়লে কবে নাগাদ, এর ব্যাপকতাই বা কেমন হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন এদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন, এইমস (AIIMS) প্রধান ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেছেন, “দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তৃতীয় ঢেউ এতখানি ব্যাপক আকার ধারণ করবেনা বলেই মনে হচ্ছে!” তা সত্ত্বেও প্রস্তুতি’তে খামতি রাখতে রাজি নয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। নির্দেশ মেনে জেলা প্রশাসনগুলিও সার্বিকভাবে পরিকাঠামো তৈরিতে তৎপর। এর মধ্যেই, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য সুখবর এসে পৌঁছেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে। যৌথ সহায়তায় জেলায় তৈরি হচ্ছে মোট ৪ টি (চারটি) মেডিক্যাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। এর মধ্যে, দু’টি তৈরি হবে কেন্দ্রীয় সহায়তায় এবং দু’টি রাজ্যের একক উদ্যোগে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যে ২ টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে ১টি পিএসএ (Pressure Swing Adsorption) অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং অন্যটি এলএমও (Liquid Medical Oxygen Plant) প্ল্যান্ট। প্রথমটি কেন্দ্রের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI) এবং ডিআরডিও (Defence Reasearch And Development Organisation) যৌথভাবে তৈরি করবে এবং দ্বিতীয়টি রাজ্য সরকারের অধীনস্থ WBMSCL (West Bengal Medical Service Corporation Ltd.), সিটকো সংস্থা’র সহায়তায় তৈরি করবে। অপরদিকে, শালবনী সুপার স্পেশালিটিতে পি এস এ অক্সিজেন প্ল্যান্টটিও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যে পি এস এ অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের CPWD এবং DRDO যৌথভাবে তৈরি করবে বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “জেলায় ৪ টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হবে। ৩ টি পি এস এ অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং একটি এল এম ও প্ল্যান্ট। আগামী একমাসের মধ্যে হয়তো কাজগুলি সম্পন্ন হবে।” এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরে সংক্রমণের ওঠানামা অব্যাহত থাকলেও, এই মুহূর্তে পজিটিভিটি রেট ৫ শতাংশের কম আছে বলেই জানিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৭৪ জন। সোমবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার (২৭ জুন) আরটিপিসিআর টেস্টে ২০ জন, অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৭ জন ও ট্রুন্যাটে ৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তবে, শনিবার জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন ইদানিং কালের মধ্যে সর্বাধিক ১৯৫ জন (রবিবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী)! ফলে, স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৭ দিনে জেলায় মোট করোনা সংক্রমিত হলেন- ৯৬২ (১১৩, ১২৪, ১৬২, ১৫৬, ১৩৮, ১৯৫ ও ৭৪) জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলার করোনা হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৩ জনের এবং হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন আছেন মাত্র ১০ শতাংশ রোগী (মোট শয্যার)।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় (রবিবার) মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকা মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ১৫ জন। এর মধ্যে, মেদিনীপুর শহরের আবাসের ৩ জন, গান্ধীঘাটের ২ জন, বিধাননগরের ২ জন এবং মহতাবপুর, কুইকোটা, রাঙামাটি, পাটনা বাজার, দেশবন্ধু নগরে ১ জন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গোপগড়ে ২ জন ও পাইকারপাড়ায় ১ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায়। অপরদিকে, শনিবার (২৬ জুন) মেদিনীপুর শহর ও সদর ব্লক মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন- ৫১ জন। এর মধ্যে শহর থেকে ৩৮ (কোতোয়ালি ১১, অরবিন্দ নগর ২, কুইকোটা ৪, মহতাবপুর ৩, রাঙামাটি ৩, হবিবপুর ৩, শরৎপল্লী ২, বড় আস্তানা ১, বার্জটাউন ১, কর্ণেলগোলা ১, মির্জাবাজার ১, উদয়পল্লী ১, তাঁতিগেড়িয়া ১, পুলিশ লাইন ১, নতুন বাজার ১, পাটনা বাজার ১) জন এবং সদর ব্লক থেকে ১৩ (শিরোমণি, পাল ট্যাগরা, মুড়াকাটা, খয়রুল্লা, বেলিয়াশোল, ধেড়ুয়া, সারেঙ্গাশোল, গুড়গুড়িপাল এবং দাদরাশোলে ২ জন ও চাঁদড়ায় ৩ জন) জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, খড়্গপুরে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে, শহরের ৮ জন, গ্রামীণ এলাকার ৪ জন ও রেল সূত্রে ২ জন। তবে, এর আগের দিন অর্থাৎ ২৬ জুন খড়্গপুরে প্রায় ৪০ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। তালিকায় শহর, গ্রাম, রেল ও আইআইটি’র বাসিন্দারা ছিলেন।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় শালবনীতে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৯ জন (তার আগের দিন মাত্র ৪ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ওসিএল থেকে ২ জন)। ৯ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩ জন শালবনীর, ৩ জন সিআইএসএফের, ১ জন মধুপুর, ১ জন সিদাডিহি ও ১ জন পানিসরার বাসিন্দা। অপরদিকে, ডেবরায় ৫ (অন্তলা, নারুল্লাচক-রাধাচন্দনপুর, কালুয়া বৃন্দাবাড়ি, বালিচক, চকলালপুর, পদিমা) জন; পিংলায় ২ (মীরপুর-যশোরাজপুর, মহিশগোট-উত্তরবাড়) জন এবং সবংয়ে ১ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায়। এদিন সংক্রমণ অনেক কম হলেও, ২৬ জুন (অর্থাৎ, ২৭ শে জুনের ১৯৫ জনের রিপোর্ট অনুযায়ী) পিংলার কুঞ্জপুর ও জলচকের ৫ জন সহ মোট ৮ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল, সবংয়ের জুলকাপুর ও এড়ালে একাধিক জন সহ মোট ৫ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। অপরদিকে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় কেশিয়াড়িতে একজনের রিপোর্টও পজিটিভ না এলেও, তার আগের দিন (২৬ জুন), বড়মারাতে ৪ জন, এলাসাইতে ২ জন সহ মোট ৮ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিলো। এদিকে, বেলদা নারায়ণগড় এলাকায় ৫ (সবুজপল্লী, কুনারপুর, বিরবিরা, পাকুড়সেনি, সিয়ারা) জন, দাঁতনে ২ (শালিকোঠা, গাজীপুর) জন এবং কেশপুরে ৩ (আনন্দপুর, কেশপুর, শাঁকপুর) জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায়। গড়বেতার তিনটি ব্লক মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৫ জন। অন্যদিকে, ঘাটাল মহকুমায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৬ জন।